শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশের পুষ্টি প্রসঙ্গ

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ২১:২২

সম্প্রতি বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিবিষয়ক একটি নূতন প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে। প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা-এফএও, কৃষি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তহবিল, শিশু তহবিল, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে তৈরি করিয়াছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি সম্পর্কে যাহা বলা হইয়াছে তাহা বাস্তবসম্মত নহে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসকল তথ্য দেওয়া হইয়াছে সেই ব্যাপারেও রহিয়াছে প্রশ্ন। বলা হইয়াছে, বাংলাদেশে ২ কোটির বেশি মানুষ ভালোভাবে খাইতে পায় না। তাহারা ভোগে অপুষ্টিতে। দেশের প্রতি ছয় জনের একজন পুষ্টিহীনতার শিকার। এমনকি গত এক দশকে বাংলাদেশে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়িয়াছে অন্তত ১০ লক্ষ। ২০০৪ সালে যেখানে দেশে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লক্ষ, সেখানে ২০১৮ সালে তাহা আসিয়া দাঁড়ায় ২ কোটি ৪০ লক্ষে। বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র কি ইহার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ?

গত এক দশকে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করিয়াছে। বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। গত এক দশকে দারিদ্র্য কমিয়াছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই যখন বাস্তবতা, তখন অপুষ্টির হার কীভাবে বাড়িতে পারে? এখানে কোনো শুভংরের ফাঁকি আছে কি না তাহা গভীরভাবে ভাবিয়া দেখা দরকার। বিশেষত অপুষ্টির মানদণ্ডের বিষয়টি প্রশ্নাতীত নহে। সাধারণত দৈনিক ১৬০০ ক্যালরির খাবার না খাইলে যে কেহ অপুষ্টির শিকার হইতে পারে বলিয়া পশ্চিমা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কিন্তু দেশ ও আবহাওয়াভেদে এই ক্যালরির হিসাব নাও মিলিতে পারে। উন্নত বিশ্বে সাধারণত খাদ্যের অপচয় সবচাইতে বেশি হইয়া থাকে। তাহাদের একসঙ্গে নানা পদের অনেক খাবার না হইলে চলে না। এই অতিরিক্ত খাদ্য খাইয়া তাহারা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। সেই দৃষ্টিকোণ হইতে যদি বলা হয় বাংলাদেশের ২ কোটিরও বেশি মানুষের ভাগ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য জুটিতেছে না তাহা হইলে ভিন্ন কথা!

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে একসময় ‘মঙ্গা’ শব্দটি বেশ পরিচিত ছিল। একশ্রেণির প্রান্তিক মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক অভাব-অনটনের প্রতীক এই শব্দটি এখন আর উচ্চারিত হয় না। মানুষ না খাইয়া মারা যাইতেছে এমন খবরও পাওয়া যায় না। বরং আমরা দেখিতে পাই, গ্রামাঞ্চলে আজ ধান কাটিবার মতো শ্রমিক খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বাড়িতেছে হুহু করিয়া। গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশের কারণে বাসাবাড়িতে কাজ করিয়া অন্ন সংস্থানের লোকও এখন একেবারেই কমিয়া গিয়াছে। পথেঘাটে চলিতে-ফিরিতে যে চিত্র আমরা দেখিতে পাই তাহাতে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগিতেছে, এমন তথ্য অনেকের নিকটই অবিশ্বাসযোগ্য মনে হইবে। যাহারা এই ধরনের গবেষণাকর্মে জড়িত, তাহারা কাহার টাকায় ও কী উদ্দেশ্যে গবেষণা করেন, তাহা আমাদের অনেকের অজানা ও বোধগম্য নহে। তবে এই কথাও সত্য যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাদ্যের সহজলভ্যতা থাকিলেও অনেকে মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার খান না। এইজন্য অজ্ঞতা ও অসচেতনতাই দায়ী। দামি খাবার হইলেই তাহা পুষ্টিসমৃদ্ধ হইবে এমন কোনো কথা নাই। আবার খাদ্যের উত্পাদন বাড়িলেও জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণসহ বিভিন্ন ঝুঁকির কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। এই ব্যাপারে মানুষের সঠিক খাদ্যাভাস গড়িয়া তোলা ও সতর্ক থাকাটা একান্ত কাম্য।