শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডালে ডালে চোর আর পাতায় পাতায় প্রযুক্তি

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৯, ২১:৩০

কথিত রোমিও গ্যালগ্যালে হাসি দিয়া পথিমধ্যে স্কুলগামী কিশোরীর দিকে তাকাইয়া রহিল। সলজ্জ কিশোরী হঠাত্ যেন সাহসিনী হইয়া উঠিল। স্থিরচক্ষে তাকাইয়া রহিল ত্যক্তকারী উচ্ছৃঙ্খল ছেলেটির দিকে। মেয়েটির অপলক চাহনি যেন রোমিও ছেলেটিকে আরো উসকাইয়া দিল। তাই তাহার ফিচকে হাসি ছড়াইয়া পড়িল আকর্ণ। মেয়েটি চলিয়া গেল। ছেলেটিও বিমল আনন্দ লাভ করিল মনমতো ইভটিজিং করিতে পারিয়া। তাহার পর ঘটিল নাটকীয় কিছু ঘটনা। ইভটিজিংয়ের অপরাধে ছেলেটিকে পুলিশ ধরিয়া লইল। পুলিশের নিকট ছেলেটি ভাজা মাছটি উলটাইয়া খাইতে না পারিবার মতো ভণিতাও করিল। কিন্তু থানার মনিটরে ভাসিয়া উঠিল ছেলেটির সেই গ্যালগ্যালে হাবভাব, আকর্ণ ফিচকে হাসি এবং অভব্য ইঙ্গিতসহ সম্পূর্ণ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ। ইহা কী করিয়া সম্ভব? দুবির্নীত রোমিওর চোখে বিস্ময় ঘনাইল!

আসলে, স্কুলগামী মেয়েটির চোখে ছিল স্মার্টলেন্স। আর এই স্মার্টলেন্স দিয়াই আদ্যোপান্ত ইভটিজিংয়ের ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করিয়াছে সে এবং ইভটিজিংয়ের প্রমাণস্বরূপ জমা দিয়াছে পুলিশের নিকট। পুলিশ এই অভিযোগ গ্রহণ না করিতেও পারে। সেইক্ষেত্রে উহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুলিয়া দিতে পারে মেয়েটি। এমনকি তাহা ভাইরালও হইতে পারে। শুনিতে কল্পবিজ্ঞানের সিনেমার মতো মনে হইতে পারে—কিন্তু প্রযুক্তির বিস্ময়কর উল্লস্ফনে এই ধরনের প্রযুুক্তিও আজ সাধারণ মানুষেরও মুঠোর মধ্যে চলিয়া আসিতেছে। দৃষ্টি সমস্যা বা ফ্যাশনের জন্য কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার নূতন কিছু নহে। এই ধরনের লেন্সই এখন হইয়া উঠিতেছে স্মার্টলেন্স। এই স্মার্টলেন্সের মধ্যেই বসানো থাকিবে ক্যামেরা ও ছোটো একটি অ্যান্টেনা। সাধারণ লেন্সের আদলে চোখে পরা যাইবে বিশেষ ধরনের এই স্মার্টলেন্সটি। ছবি বা ভিডিও তোলার জন্য কোনো সুইচ বা অ্যাপও ব্যবহার করিতে হইবে না। চোখের মণি বিশেষ ভঙ্গিতে নাড়ালেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাইবে। জানা গিয়াছে, ইতোমধ্যে স্মার্টলেন্সটি তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব কার্যালয় হইতে অনুমোদন পাইয়াছে বিশ্বখ্যাত একটি কোম্পানি। অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিতে স্মার্টলেন্সটি বাজারজাতের উদ্যোগও গ্রহণ করা হইয়াছে।

আমরা আসলে এমন এক প্রাযুক্তিক বিশ্বের দিকে ধাবিত হইতেছি, যেইখানে অভাবিত এবং বিস্ময়কর বলিয়া আর কিছু থাকিবে না। অতি সূক্ষ্ম সব নজরদারির মধ্যে নিজেদের অজান্তেই ঢুকিয়া পড়িতেছে পুরো মানব জাতি। অপরাধ করিবার প্রধান শর্তই যেহেতু প্রমাণ না রাখা, সেই কারণে অপরাধ করিয়া পার পাইবার সুযোগও কমিয়া যাইতেছে ক্রমশ। বিদ্যমান প্রযুক্তির কিছু কিছু দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজেও পাওয়া যাইতেছে। কিছুদিন পূর্বে বরগুনার রিফাত-হত্যার ঘটনাটি একটি ক্যামেরায় ভিডিও করা সম্ভব হয় বলিয়াই উহা লইয়া দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে। এমনকি পরবর্তী পর্যায়ে আরো কিছু সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনাটির আরো নানান দিক প্রকাশ পায়। যদিও একটি ভিডিওর বিশ্বাসযোগ্যতা যে সকল সময় থাকিবেই, তাহা নহে। তবে কেহ এডিট করিয়া ভিডিও তৈরি করিলে উহাও শতভাগ নিশ্চয়তার সহিত শনাক্ত করা যায়। সুতরাং প্রযুক্তির হাত এতটাই লম্বা হইয়া যাইতেছে যে, অপরাধীরা যত ধরনের ডাল-পালার আড়ালেই নিজেকে লুকাইয়া রাখুক না কেন, প্রযুক্তির বিচরণ কেবল পাতায় পাতায় নহে, শিরায় শিরায়।