শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কোরবানির চামড়া সংগ্রহে অব্যবস্থা

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৬

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের পরেই রহিয়াছে ট্যানারি-শিল্পের অবদান। যদিও বিশ্বের মোট ট্যানারি-শিল্পের ক্ষুদ্র অংশই বাংলাদেশে উত্পাদিত হইয়া থাকে, তবুও এই ক্ষেত্রটি সম্ভাবনাময়। কারণ বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বাংলাদেশ এই শিল্পে ভবিষ্যতে আরো আগাইয়া যাইবে—এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। আর এই ট্যানারি-শিল্পের কাঁচামাল চামড়ার প্রধান জোগান আসে কোরবানি মৌসুমে। সরকারি হিসাবে এইবারেও প্রায় সোয়া কোটি পশু কোরবানি দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু এইবার চামড়া সংগ্রহে বেশ খানিকটা অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা গিয়াছে। অনেক জায়গায় চামড়া পচিয়া নষ্ট হইয়াছে। সাধারণত কোরবানি যাহারা দেন, তাহাদের নিকট হইতে কাঁচা চামড়া ক্রয় করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, পরে তাহারা বিক্রয় করেন পাইকারদের নিকট। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়া সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সারিয়া বিক্রয় করেন ট্যানারিতে। ফলে এই সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারির মালিকেরা। ন্যূনতম কোন দামে তাহারা সেই চামড়া ক্রয় করিবেন তাহা ঈদের আগে ঠিক করিয়া দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সোমবার ঈদের বিকাল হইতেই চামড়ার দাম পড়িয়া যাওয়ার খবর আসিতে থাকে। ফড়িয়া আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের নিকট হইতে নামমাত্র দামে চামড়া কিনিয়াও পাইকারদের কাছে বিক্রি করিতে না পারিয়া শঙ্কিত হইয়া উঠেন। কারণ, সংগ্রহ করা চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা তাহাদের নাই। এইবার প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ হইতে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাহিরে ৩৫ হইতে ৪০ টাকায় ক্রয় করার কথা ট্যানারি ব্যবসায়ীদের। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে ক্রয়-বিক্রয় হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দাম অনেক কম দেখা যায়। ফলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় চামড়া ক্রয় করিয়া অনেক জায়গায় সেই চামড়ার বিক্রয়মূল্য পান ৫০ টাকা। ইহাতে তাহাদের পরিবহন খরচও উঠিয়া আসে না। এই কারণে তাহারা বিক্রয় করা থেকে বিরত থাকেন। চট্টগ্রামে লক্ষাধিক গরু, ছাগলের চামড়া রাস্তায় ফেলিয়া দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্ চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগরেও কাঁচা চামড়া বিক্রি করিতে না পারিয়া বাজারে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অনেক এতিমখানা তাহাদের সংগ্রহ করা চামড়া মাটিতে পুঁতিয়া ফেলিয়াছে।

সরকারের পক্ষ হইতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির ঘোষণা প্রদান করা হয়। তবে এই ঘোষণা যদি অন্তত এক দিন পূর্বে দেওয়া হইত, তাহা হইলে এই বিপুলসংখ্যক চামড়া নষ্টের হাত হইতে রক্ষা পাইত। পাশাপাশি চামড়া প্রস্তুতিতে নানা প্রকার অদক্ষতা রহিয়াছে; যাহার ফলে চামড়া নষ্ট হইয়া থাকে। ইহা ছাড়া চামড়াকে কেন্দ্র করিয়া, বিশেষ করিয়া কোরবানির সময় পাড়া-মহল্ল­ায় নানা দুষ্টচক্র, মাস্তান সম্প্রদায় গজাইয়া উঠে। চামড়াশিল্পকে বাঁচাইতে এই দুষ্টচক্রগুলো নির্মূল করিতে হইবে। এইবারের বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আগামী দিনে সতর্ক করিবে বলিয়া আমরা আশা করি।