শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছুটি শেষের চিরাচরিত দুর্ঘটনা

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ২১:০৯

ঈদ নিয়া আসে আনন্দের উপলক্ষ্য; কিন্তু সেই আনন্দ কখনো কখনো বিষাদে পরিণত হয়। বিশেষ করিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় যেই পরিবারের সদস্য প্রাণ হারায়, সেই পরিবারে জন্য ঈদের আমেজ শোকে পরিণত হয়। আর ঈদ আসিলে সড়ক দুর্ঘটনার হারও বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। এইবার ঈদুল আজহায় সারা দেশে এখন পর্যন্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ নিহত হইয়াছেন। ঈদ যাতায়াতের অর্ধেকটা এখনো বাকি রহিয়াছে। হতাহতের সংখ্যা কোথায় গিয়া থামে, তাহা বলা মুশকিল। গত ঈদুল ফিতরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪২ জন নিহত ও ৩২৪ জন আহত হইয়াছিল। এই ঈদে এখন পর্যন্ত রাজধানী, দিনাজপুর ও কুমিল্লায় চার জন করিয়া; বগুড়ায় ও কুষ্টিয়ায় তিন জন করিয়া; গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও গোপালগঞ্জে দুজন করিয়া; নাটোর, রংপুর, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, ভোলা, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মাদারীপুর, মৌলভীবাজার ও খুলনায় একজন করিয়া নিহত হইয়াছেন। এ নিয়ে ১০৭ দিনে সড়কে প্রাণহানি হইয়াছে ৯৮৫ জনের। বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটিয়াছে। কোনোভাবেই যেন সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাইতেছে না।

দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইলেও তাহা বাস্তবে কার্যকর প্রভাব রাখিতে ব্যর্থ হইতেছে। দুর্ঘটনার পিছনে মূল কারণগুলোর অন্যতম হইল—সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বাড়তি ট্রিপ দেওয়া, ওভারটেকিং এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল। ইহা ছাড়া রহিয়াছে আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনার অভাব, চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও ত্রুটিযুক্ত যানবাহন। কারণগুলি কমবেশি সকলের জানা থাকিলেও ইহা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা কেন হইতেছে না, তা ভাবিয়া দেখা দরকার। অবৈধ লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সড়কে নামার সুযোগ পায় কীভাবে?  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণে যানবাহনের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হইলেও এর পরপরই ঐ যানবাহনটি সড়কে চলাচলের সুযোগ পাইয়া যাইতেছে। কোনো গণপরিবহন যদি ত্রুটিপূর্ণ হইয়া থাকে, তাহলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকিয়াই যায়। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলার অভাব তো রহিয়াছেই। এই সমস্ত ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। সড়ক অব্যবস্থাপনার পেছনে বাস মালিকদেরও ভূমিকা রহিয়াছে। দেখিতে হইবে কেহ যেন ছাড় পাইয়া না যায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্ষতিপূরণের দিকটিও গুরুত্ব প্রদান করিয়া দেখিতে হইবে। প্রয়োজনে এই সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান ও আইনের সংস্কারের পদক্ষেপ লইতে হইবে। যে কোনোভাবেই হউক, সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনিতে হইবে; কারণ বর্তমানে যাহা চলিতেছে কোনোভাবেই তাহা আর চলিতে দেওয়া যায় না।