বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২১ আগস্ট :বাঁচা-মরার সেই বিস্ময়কর দিন

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৯, ২১:০০

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আজ দেড় দশক। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি একটি ভয়াবহ ও জঘন্য অপরাধ সংঘটনের দিন হিসাবে চিহ্নিত হইয়া আছে। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ অনেকে প্রাণ হারাইয়াছেন, চিকিত্সার ঊর্ধ্বে উঠিয়া গিয়াছেন, আবার শেখ হাসিনাসহ হামলার শিকার যাহারা বাঁচিয়া রহিয়াছেন তাহাদের অনেকেই এখনো চিকিত্সা গ্রহণ করিতেছেন। শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য যাহারা আহত হইয়াছিলেন তাহাদের চিকিত্সা যে চলিতেছে না এমন নহে। তবে সেই হামলার সবচাইতে বড়ো বিস্ময় ছিল মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনার প্রাণে রক্ষা পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই বলিয়া থাকেন, তাহার পিতার আশীর্বাদের হাত রহিয়াছে তাহার মাথার উপর। তাহার এই উক্তির মধ্যে যুক্তি ও কারণ দেখিতে পাওয়া যায়। বোধ করি, সৃষ্টিকর্তা তাহার পিতার সেই আশীর্বাদকে গ্রহণ করিয়াছেন। সৃষ্টিকর্তাই নির্ধারণ করিয়াছেন যে তিনি বারংবার প্রাণে রক্ষা পাইবেন, দেশ পরিচালনা করিবেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের সামনে থাকিয়া নেতৃত্ব দিবেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাহার তিন পুত্রসমেত পরিবার, নিকটাত্মীয় ও স্বজনসহ যখন খুনিচক্রের হাতে শাহাদত বরণ করেন, তখনো কেবল শেখ হাসিনা তাহার ছোটো বোন শেখ রেহানাসহ ঘটনাক্রমে দেশের বাহিরে অবস্থান করিতেছিলেন। বঙ্গবন্ধুতনয় শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেলের মধ্যে কেহ বাঁচিয়া থাকিলে এখন বয়স হইত যথাক্রমে ৭০, ৬৫ এবং ৫৫ বত্সর।

ইতিহাসে আমরা বহু গুপ্তহত্যা ও হত্যাচেষ্টা দেখিতে পাই। ফরাসি  সামরিক নেতা ও প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গলের উপর ১৪০টি বুলেট ছোড়া হইলেও তিনি অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বাঁচিয়া যান। হত্যার উদ্দেশ্যে সরাসরি হামলা হইতে রক্ষা পান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রিউ জ্যাকসন, থিওডোর রুজভেল্ট, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, রোনাল্ড রিগ্যান প্রমুখ। আবার এই ধরনের গুপ্ত হামলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাণ দিয়াছেন মহাত্মা গান্ধী এবং জন এফ কেনেডিসহ আরো অনেকে। শেখ হাসিনা প্রথমদের দলেই কেবল নহেন, তাহার উপর যেই মাত্রায় হামলা হইয়াছিল, তেমন হামলা হইতে প্রাণে রক্ষা পাওয়া সৃষ্টিকর্তার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা আর কী ভাবিতে পারি?

যাহারা হামলা চালাইয়া শেখ হাসিনাকে হত্যা করিতে চাহিয়াছে, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করিতে চাহিয়াছে তাহাদের জানা নাই, শারীরিকভাবে কাহাকে হত্যা করিলেই আদর্শকে হত্যা করা যায় না। ঐ হামলায় আহত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে আরো বহুগুণ শক্তিশালী হইয়া উপস্থিত হইয়াছেন। ইহা মতাদর্শের দিক হইতেও, মনোবলের দিক হইতেও।

তবে আজকের এই শোকের দিবসে একটি কথা আমাদের মনে রাখিতে হইবে। এই ধরনের হামলা যে আর কখনোই হইবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই। এই রকম হামলার পিছনে সাধারণত সমাজের অস্থিরতা এবং মতাদর্শগত বিরোধ কাজ করিয়া থাকে। আর সমাজে অস্থিরতার প্রধান একটি কারণ আইনের যুগোপোযুগী সংস্কার না হওয়া। দেশে এখনো বেশিরভাগ আইন চলিতেছে উনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশদের সৃষ্ট আইনের ব্যবহারের মধ্য দিয়া। সার্বিকভাবে দেশকে স্থিতিশীল করিতে, ২১ আগস্টের মতো জঘন্য অপরাধ হইতে মুক্ত রাখিতে প্রচলিত আইনের ঢালাও সংস্কারের প্রয়োজন রহিয়াছে বইকি।