শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রেক্সিটে বিপর্যস্ত ব্রিটেন

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫১

ব্রেক্সিট লইয়া ব্রিটেন কোন পথে যাইতেছে তাহা বুঝিবার সাধ্য এই মুহূর্তে কাহারও আছে বলিয়া মনে হইতেছে না। নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতায় আসিয়াই নির্ধারিত সময়সীমা অর্থাত্ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যে  কোনো মূল্যে একটা হেস্তনেস্ত করিয়া ফেলিবার ঘোষণা দিয়া ফেলিয়াছিলেন। কিন্তু দেশের ভিতরে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) কঠোর অবস্থানের মুখে তিনি কতটা কী করিতে পারিবেন তাহা লইয়া সমূহ সন্দেহ দেখা দিয়াছে। উল্লেখ্য, ইইউর সহিত প্রয়োজনে কোনো ধরনের ঐকমত্য ব্যতিরেকেই (নো-ডিল) ব্রেক্সিট সম্পন্ন করিবার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী হইবার অনেক আগে হইতেই দিয়া আসিতেছেন জনসন। এক্ষণে তিনি বুঝিতে পারিতেছেন যে, পদে আসীন না থাকা অবস্থায় অনেক কথা বলা গেলেও, পদে আসীন হইয়া সেই সমস্ত কথাবার্তা বাস্তবায়ন করা কতখানি কষ্টসাধ্য।

জনসন নিজ দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ভিতর হইতেই বড়ো ধরনের চাপের মধ্যে আছেন। বিশেষ করিয়া শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ বেশ কয়েকজন এমপি ভীষণভাবে নো-ডিল ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অবস্থান লইয়াছেন। তাহারা কোনো ধরনের বোঝাপড়াহীন ব্রেক্সিটকে জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর মনে করিতেছেন। এই এমপিরা প্রয়োজনে বিরোধী দল লেবার পার্টির সহিত জোট বাঁধিয়া পার্লামেন্টের মাধ্যমে জনসনকে ঠেকাইবার চেষ্টার করিতে পারেন বলিয়া কথাবার্তা শোনা যাইতেছে। এইদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষ হইতে দলনেতা জেরেমি করবিনকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী করিয়া ঐক্যমতের সরকার গঠনপূর্বক নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হইয়াছে। লেবার পার্টির মতে, বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হইয়া উঠিয়াছে যে নতুন একটি সরকার গঠন পর্যন্ত ব্রেক্সিট-বিষয়ক কোনো ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনুচিত হইবে। ইইউও জনসনের নো-ডিল ব্রেক্সিটের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করিয়াছে। বিশেষ করিয়া, ব্রেক্সিটের পরে ব্রিটেনের অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের সহিত স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত-সম্পর্ক কেমন হইবে তাহা লইয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটিতেছে। উল্লেখ্য, ১৯২২ সালে ব্রিটেন হইতে বাহির হইয়া রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড গঠিত হইলেও, ১৯৯৮ সালের ঐতিহাসিক গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট মোতাবেক দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যে অবাধ যাতায়াত ও অন্যান্য সম্পর্ক চালু রহিয়াছে। জনসনের প্রস্তাবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ব্রেক্সিটের পরে কেমন হইবে, তাহার কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকিবার কারণেই নতুন জটিলতা দেখা দিয়াছে। এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, ব্রেক্সিট গণভোটে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৬০ ভাগের বেশি মানুষ ব্রিটেনের ইইউ ছাড়িবার বিপক্ষে মত দিয়াছে।

জনসনের রাজনীতির প্রধান স্তম্ভ হইতেছে অভিবাসী-বিদ্বেষ, অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাস ও কট্টর অভিবাসননীতির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা। এইগুলিকে সম্বল করিয়াই জনসন এতদূর আসিয়াছে। শুধু তাহাই নহে, তিনি নিজেকে অন্যতম প্রধান ব্রেক্সিটপন্থি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম হইয়াছেন। এইবার আসল পরীক্ষা। ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতি আর কতদূর যাইতে পারে তাহার একটি পরীক্ষা ব্রেক্সিটকে ঘিরিয়া আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হইয়া যাইতে পারে। অন্যদিকে সর্বশেষ বরিস জনসনের জার্মান সফরকে ঘিরিয়া কেহ কেহ একটি নূতন গতি হইবে বলিয়া আশা করিতেছিলেন। কিন্তু অ্যাঙ্গেলা মেরকেল সরকারে কর্মকর্তারা সফর শুরুর ঠিক পূর্বেই জানাইয়াছেন, বরিসের সফর সত্ত্বেও ব্রেক্সিট লইয়া জার্মান সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হইবে না।