শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইনটি যুগোপযোগী করিয়া তোলা জরুরি

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৩

যুগ পালটাইয়াছে। পালটাইয়াছে মানুষের জীবনাচার, দৃষ্টিভঙ্গি ও গতি। সেই সঙ্গে পালটাইয়াছে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মপদ্ধতি, অবকাঠামো, লোকবল। পালটাইয়াছে রাজনীতি ও মানচিত্র। কেবল পালটায় নাই দেড় শত বত্সর আগে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি বেশিরভাগ আইন। অথচ এই আইন তো মানুষের জীবনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত! গুরুত্বপূর্ণ আইনের ধারাগুলি দেড় শত বত্সর পিছাইয়া থাকিলে চলিবে কেন? তেমনি অসংখ্য অতীতকালে সৃষ্ট আইনের মধ্যে একটি আইন লইয়া যথার্থই কথা তুলিয়াছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাহারা ১৮৭২ সালের এভিডেন্স অ্যাক্ট বা সাক্ষ্য আইনকে যুগোপযোগী করিয়া তুলিতে আবেদন জানাইয়াছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ বরাবর। তাহাদের ভাষ্যমতে, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে ইলেকট্রনিক রেকর্ডের সাক্ষ্য মূল্য সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয় নাই বিধায় প্রায়শই তদন্ত ও বিচারকালে রেকর্ডে ধারণকৃত প্রমাণপত্র জব্দ ও উপস্থাপন করা হয় না। যদিও টেপ-রেকর্ড, টেলিফোন আলাপ ও ভিডিও ক্যাসেটে ধারণকৃত তথ্য-উপাত্ত বিচারকালে প্রাসঙ্গিক মর্মে আদালতের সিদ্ধান্ত রহিয়াছে, কিন্তু ইলেকট্রনিক রেকর্ড বিজ্ঞানে আওতাধীন হওয়ায় বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রাসঙ্গিক। উল্লেখ্য, ১৮৭২ সালের আইনে মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের ওপরই জোর দেওয়া হইয়াছে। তখন যাহারা আইনটি করিয়াছিলেন তাহাদের না ছিল ভিডিও রেকর্ড সম্পর্কে ধারণা, না ছিল অডিও রেকর্ড-সম্পর্কিত জ্ঞান। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করিতেছে। এখন রহিয়াছে মাইক্রো ক্যামেরা, গোয়েন্দা ক্যামেরা, চিকিত্সা ক্যামেরাসহ বিস্ময়কর সব প্রযুক্তিগত আবিষ্কার। এবং এই প্রযুক্তি নিঃসেন্দহে মৌখিক ও কাগুজে সাক্ষীর চাইতে অধিক নির্ভরযোগ্য।

অতএব ইহা সুস্পষ্ট আইনের অধীন আসা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। লক্ষ করিলেই দেখা যাইবে, বর্তমান সময়ের বহু চাঞ্চল্যকর মামলার সূত্রপাত হইয়াছে অডিও ও ভিডিও প্রচারের মধ্য দিয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসিয়াছে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিও রেকর্ডিং অথবা অডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গিয়াছে বা দেখা যাইতেছে, ভিডিও বা অডিও সাক্ষী ছাড়া অন্য কোনো প্রত্যক্ষকারী নাই। ঐ অডিও বা ভিডিওর সূত্র ধরিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করিতেছে। ইহা ছাড়াও সিসিটিভি বিস্তার লাভ করিতেছে দ্রুত, যাহার ফুটেজ অনেক কিছু বলিয়া দিতেছে। সুতরাং এই প্রযুক্তির অগ্রাধিকার প্রদান এখন সময়ের দাবি হইয়া উঠিয়াছে। তবে ইহাও ঠিক যে উহার অপব্যবহারের কিছু আশঙ্কাও রহিয়াছে। সেইজন্য আদালতে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করা যাইতে পারে।

দেশের আইন পাশ করিয়া থাকেন আইনপ্রণেতা, অর্থাত্ দেশের সংসদ সদস্যগণ। তাহাদের মধ্যে প্রায় সকলেই এখন ভিডিও, অডিও সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। ইহা ছাড়াও তাহারা জ্ঞাত আছেন যে বেশ কিছু কমনওয়েলথভুক্ত দেশসহ (যাহাদের আদালতের রায় ও বিচারিক মন্তব্য আমাদের দেশে রেফারেন্স হিসাবে গ্রহণ করা হইয়া থাকে) বিশ্বের আধুনিক অনেক দেশেই আদালতে এখন প্রযুক্তিকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হইতেছে। সুতরাং ১৯৭২ সালের আইনটি সংস্কার মাধ্যমে যুগোপযোগী করিয়া তুলিতে আমরা অনুরোধ জানাই।