শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ২১:০৯

নিজের ক্ষতি স্বীকার করিয়াও অন্যকে কীভাবে শায়েস্তা করিতে হয়, তাহা লইয়া একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। এক ব্যক্তি একটি অকস্মাত্ আলাদিনের চেরাগ হাতে পাইল। তাহাতে ঘষা দিতেই দৈত্য আসিল এবং জানাইল, ঐ ব্যক্তি যাহা চাইবে তাহার দ্বিগুণ পাইবে তাহার প্রতিবেশি। প্রতিবেশির সহিত ঐ ব্যক্তির ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সুতরাং লোকটি দৈত্যকে বলিল তাহার একটি চোখ অন্ধ করিয়া দিতে, যাহাতে প্রতিবেশির দুইটি চোখই অন্ধ হইয়া যায়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা অর্থনীতিতেও নানান সময়ে বিচিত্র সব কৌশল অবলম্বন করা হয়। যেমন—ইরাক, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এবং রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা ও ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ ইত্যাদি কারণে বিশ্ববাজারে কয়েক বত্সর ধরিয়া তেলের দাম আকাশচুম্বী হইবার কথা ছিল। ইহাতে ভয়ানক সমস্যায় পড়িত মার্কিন ও ইউরোপীয় অর্থনীতি; কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরব বিশ্ববাজারে তৈলের বন্যা বহাইয়া দিল, ধস নামাইল তৈলের বাজারে। গত বত্সরের নভেম্বর হইতে প্রতিদিন গড়ে রেকর্ড মাত্রায় ১১ মিলিয়ন ব্যারেল তৈল উত্তোলন করিয়াছে সৌদি আরব। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন-মিত্র সৌদি আরব তাহার প্রতিপক্ষ ইরান ও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসাবে এবং মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতি চাঙা করিতে ল্যাটিন আমেরিকায় ভেনিজুয়েলার প্রভাব ক্ষুণ্ন করিয়া মার্কিন প্রভাব বাড়াইতে বিশ্ববাজারে তৈলের বন্যা বহাইয়া দিয়াছে। ইহাতে সৌদি আরবের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হইলেও রিজার্ভ ডলার দিয়া উহা সামলাইয়া নেওয়ার ক্ষমতা তাহাদের আছে। তাহা ছাড়া প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ তেল তুলিলেও সৌদি আরবের তৈলের রিজার্ভ শেষ হইতে আরও ৭০ বত্সর লাগিবে।

এইসকল পরিকল্পনা অনুযায়ী চলিবার কারণেই সৌদি আরব এখন চাহিতেছে তৈলনির্ভর অর্থনীতি হইতে ক্রমশ বাহির হইয়া আসিতে। নিঃসন্দেহে তাহাদের ভাবনা সুদূরপ্রসারী। এই কারণে দুই বত্সর পূর্বে ভিশন-২০৩০ নামের একটি লক্ষ্যমাত্রাও তৈরি করিয়াছে সৌদি আরব। ইহার জন্য শেষাবধি রাষ্ট্রীয় তৈল কোম্পানি ‘আরামকো’র শেয়ার বিক্রি করিবারও পরিকল্পনা করিয়াছে তাহারা। আরামকোর শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ বিক্রি করিলেই মিলিবে ১ লাখ কোটি মার্কিন ডলার! আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খরব অনুযায়ী, তৈলের দাম পড়িয়া যাইবার ফলে সৌদি আরবের আয় অর্ধেক কমিয়া গিয়াছে। দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের ৭০ শতাংশ আসে জ্বালানি তৈল হইতে। ২০১৯ সালের জন্য সৌদি আরব ২৯ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের এই বাজেট ঘোষণা করিয়াছিল, যাহাতে ঘাটতি ধরা হইয়াছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার! আল জাজিরা হইতে জানা যায়, তেলের দাম ক্রমশ হ্রাসের দিকে থাকিবার কারণে ষষ্ঠ বত্সরের মতো বাজেটে ঘাটতি রাখিল দেশটি। যদিও হজ ও ওমরাহর মাধ্যমে আসিতেছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। এইক্ষেত্রে পর্যটনের ওপরই জোর দিতেছে তাহারা।

ইহা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের কঠোর অনুশাসনের দেশগুলির জন্য। চিরাচরিত ধর্মীয় বিধিবদ্ধতার বাহিরে আসিয়া সেইখানে সিনেমা হল নির্মাণ, বিশেষায়িত বিচ তৈরি, নারীর বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি চালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান, বিদেশি নারীশিল্পীদের কনসার্ট, হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাণে বিনিয়োগ আসিতেছে। এই বিষয়গুলি মাত্র কিছুদিন পূর্বেও ছিল অকল্পনীয়। বলা যায়, সময়ের প্রয়োজনেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হইয়াছে নূতন সংস্কার।