শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদক কারবারিরা এত সাহস কোথা হইতে পায়?

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৫৯

মাদক কারবারিকে ক্যাম্পে লইয়া যাইতে ব্যারিকেডের মুখে পড়িয়াছে র্যাব—গত বৃহস্পতিবার ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবরটি পড়িয়া পাঠক মাত্রই বিস্মিত হইতে পারেন। কতটা বেপরোয়া হইলে একজন মাদক কারবারির সহযোগীরা একটি এলিট শ্রেণির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঔদ্ধত্য দেখাইতে পারে! প্রশ্ন জাগিতে পারে, মাদক কারবারিরা এত সাহস কোথা হইতে পায়? প্রকাশিত খবরে বলা হইয়াছে যে, মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের একজন প্রভাবশালী মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর মহেশপুরের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১১। এই সময় ঐ প্রভাবশালী মাদক কারবারিকে মাদক ও মাদক বিক্রির টাকাসহ আটক করা হয়। তবে তাহার সহযোগীরা তাহাকে ছাড়াইয়া লইতে নানা ধরনের তাণ্ডব চালায়। সহযোগীরা তিন কিলোমিটার সড়কের অন্তত ২০টি পয়েন্টে গাছ কাটিয়া রাস্তায় ফেলিয়া ব্যারিকেড দেয়। সিমেন্টের খুঁটিসহ নানা কিছু ফেলিয়া রাস্তা বন্ধ করিবারও অপচেষ্টা চালায় তাহারা। জায়গায় জায়গায় পাটখড়ি ফেলিয়া অগ্নিসংযোগ করিয়া র্যাবের পথরোধ করিবারও চেষ্টা করে তাহারা। এমনকি নারীরা পর্যন্ত র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করিবার চেষ্টা করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করিয়া প্রভাবশালী ঐ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করিয়া ক্যাম্পে লইয়া যাইতে সক্ষম হন র্যাব-১১-এর সদস্যরা।

গত দুই বত্সর ধরিয়া মাদকের বিরুদ্ধে সরকার এক অর্থে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করিয়াছে। অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হইয়াছে, নিহত হইয়াছে ক্রসফায়ারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারংবার অত্যন্ত গুরুত্বের সহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাইতে বলিয়াছেন। জিরো টলারেন্সের প্রভাব আমরা প্রায়শই দেখিতে পাইতেছি বটে। তবে বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অনেক বড়ো বড়ো দেশেও মাদক-বাণিজ্যের শিকড়বাকড় অনেক গভীর অবধি প্রোথিত। সুতরাং সেই শেকড় উত্পাটন করা এত সহজ নহে। মাদক হইল মস্তিষ্ক-খাদক। এই কারণে ইহার প্রতিক্রিয়া সমাজ ও রাষ্ট্রে সুদূরপ্রসারী। ইতঃপূর্বে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যান হইতে জানা গিয়াছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকাসক্তির চিকিত্সা লইতে আসা রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত। অনুসন্ধানে দেখা গিয়াছে, গত অর্ধদশকে নেশাখোর ছেলের হস্তে প্রায় পৌনে চার শত পিতা-মাতা খুন হইয়াছেন। একই সময়ে স্বামীর হাতে খুন হইয়াছেন আড়াই শতাধিক নারী। মাদক সেবন লইয়া ফি বত্সর গড়ে সহস্রাধিক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটিয়া থাকে। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি। কেবল তাহাই নহে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ হইতে ৩৫ বত্সরের মধ্যে এবং তাহাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। সুতরাং আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর বৃহত্ একটি অংশকে যদি মাদকের নেশায় বুঁদ করিয়া রাখা হয়, তাহা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার জন্যও অত্যন্ত নেতিবাচক।

মাদকের বাজার বিশাল, কালো টাকার ছায়াটাও তাই অনেক দীর্ঘ। ভয় এইখানেও। কারণ এই মাদক-বাণিজ্যের মাধ্যমে গোপনে সারা দেশে যে বিশাল অঙ্কের টাকার হাতবদল হইতেছে সেই টাকা কাহারা কোথায় কী কাজে ব্যবহার হইতেছে—তাহা অত্যন্ত আতঙ্কের একটি বিষয়। সুতরাং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি।