শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শৃঙ্খলাই উন্নতির সোপান

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১৮

ফুটপাতে বাসের চাপায় এক নারীর পা বিচ্ছিন্ন হইবার ঘটনার রেশ না কাটিতেই আবার বাসের ধাক্কায় ফুটপাতে পড়িয়া মাথা ফাটিয়া মৃত্যুবরণ করিলেন আরেকজন কর্মজীবী নারী। নাম তাহার ফারাহ নাজ। সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীর আমতলীতে ফ্লাইওভারের নিচে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এইভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়াই চলিয়াছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা পাইতেছি। ইহার বড়ো কারণ হইল—সর্বত্র শৃঙ্খলার অভাব। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চালকের বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। চালকদের শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশিক্ষণ, উপযুক্ত বেতন ভাতা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ইত্যাদির অভাবের কারণে তাহাদের মধ্যে সঠিক পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা গড়িয়া উঠিতেছে না। মালিকরা তাহাদের কল্যাণ ও শৃঙ্খলার প্রতি উদাসীন। আবার সড়কে বাজার, দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও বিদ্যমান।

এই প্রেক্ষিতে এইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান করিয়া সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাইতে টাস্কফোর্স গঠন করা হইয়াছে। মূলত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ১১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য এইরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে। এখন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাইতে টাস্কফোর্স কতটা কার্যকর  ভূমিকা পালন করে তাহা দেখিবার বিষয়। তবে অনেকে মনে করেন, ইহাও শেষপর্যন্ত ফলপ্রসূ হইবে না। কারণ সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গেলে পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা হরতাল ডাকিয়া বসিবে। ইহাতে নূতন করিয়া জনদুর্ভোগ বাড়িবে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হইবে। একসময় বাধ্য হইয়া শ্রমিক-মালিকদের কথাই মানিয়া লইতে হইবে। তবে ইহার স্থায়ী সমাধানের জন্য জনগণ যদি এক-দুই মাস কষ্ট স্বীকার করিতে প্রস্তুত হন এবং সরকার জনস্বার্থের ক্ষেত্রে অনড় থাকে, তাহা হইলে ফলদায়ক হইতে পারে। আমরা জানি, শহীদ রোমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হইবার পর আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েরা রাজপথে নামিয়া আসে। তাহারা সবকিছু প্রায় ঠিক করিয়া ফেলিয়াছিল। তাহারা মন্ত্রীদের গাড়িও আটকাইতে পিছপা হয় নাই; কিন্তু তাহা সত্ত্বেও সড়কে সার্বিক ও স্থায়ীভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। একটি স্বাধীন, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সকলের আগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করাই অপরিহার্য। ইহাই উন্নতির সোপান। উন্নত দেশে সড়কে সামান্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বড়ো অঙ্কের জরিমানা গুনিতে হয়। ভুল করিলে প্রধানমন্ত্রীও ছাড় পান না। তেমন শৃঙ্খলা কবে গড়িয়া তুলিতে পারিব তাহা আমরা জানি না।

মহাত্মা গান্ধী একসময় আফ্রিকা হইতে ফিরিয়া আসিয়া বলিয়াছিলেন যে, কেহ যদি তাহাকে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে যে কোনো একটিকে বাছিয়া লইতে বলে, তাহা হইলে তিনি প্রথমটিকেই বাছিয়া লইবেন। ইহা দ্বারা তিনি মূলত পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলাবোধের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করিয়াছিলেন; কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের কথাবার্তায় জনগণের মধ্যে এমন বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হইয়াছে যে, সবকিছু জনপ্রতিনিধিরাই করিয়া দিবেন। আশ্চর্যের বিষয় হইল, আমাদের ড্রাইভার ও সাধারণ মানুষ যখন মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকায় যান, তখন তাহারা ঠিকই ট্রাফিক আইন মানিয়া চলেন অক্ষরে অক্ষরে। অর্থাত্ সিস্টেম বা পদ্ধতিগত কারণেই তাহারা ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলার আওতায় চলিয়া আসেন। এমন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করিয়া আমরা কি বাংলাদেশকে আরো উন্নতির শিখরে লইয়া যাইতে পারি না?