বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লাল বলে কষ্ট বেশি!

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৪২

বিগত দুই যুগ ধরিয়া ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা। কী নাই ক্রিকেটে? মাত্র দুই দশকেই অর্থ-বিত্ত-সম্মান-প্রতিপত্তি ও রাজনীতির এক জটিল ক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে আমাদের ক্রিকেটাঙ্গন। ক্রিকেটে ঈর্ষণীয় বিজয় আমাদের উচ্ছল আবেগে ভাসাইয়াছে, আবার পরাজয়ের কণ্টকে রক্তক্ষরণ হইয়াছে হূদয়ে।

মহান অনিশ্চয়তার এক রাজকীয় খেলা ক্রিকেট। ইহার সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ ফরম্যাটটি হইল টেস্ট ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলিলেই টেস্ট খেলিবার যোগ্য সকল দেশের থাকে না। আমরা টেস্ট মর্যাদা অর্জন করিয়াছিলাম ২০০০ সালে। প্রায় ২০টি বছর পার করিয়াছে আমাদের টেস্ট ক্রিকেট। কিন্তু টিনএজ বয়স পার করিলেই এখনো যেন শৈশব ফুরায় নাই। সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেটের সবচাইতে নবীন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরাজয় যেন আমাদের ক্রিকেটপ্রেমীদের বুকে বিষাক্ত শেলের মতো বিঁধিয়া রহিয়াছে। অতি নবীন আফগানিস্তান খুব দ্রুতই যেন বিশ্ব ক্রিকেটের সমীহযোগ্য শক্তি হইয়া উঠিতেছে। প্রশ্ন হইল, বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত এই দেশটি এইভাবে ক্রিকেট-প্রতাপ ছড়াইতে পারিলে বাংলাদেশ কেন প্রায়শই ঘুরিয়া ফিরিয়া সেই তিমিরেই ডুবিয়া যাইবে? বিশেষ করিয়া টেস্ট ক্রিকেটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইহা লইয়া গত কয়েক দিন বেশ উত্তপ্ত হইয়া ছিল। তবে ইহাও সত্য যে, ওয়ানডে টি-টোয়েন্টির তুলনায় টেস্টের প্রতি খুব বেশি উত্সাহী নহে আমাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমী। ক্ষুদ্র ফরম্যাটের ম্যাচের তুলনায় ক্রিকেটের এই ক্লাসিক ইভেন্টটি বুঝিবার মতো সমঝদার দর্শকও অনেক কম। এমনকি আমাদের নবীন ক্রিকেটাররাও নাকি টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ রাখেন না। এমন একটি কথা শোনা গিয়াছে এক সিনিয়র ক্রিকেটারের মুখে। টি-টোয়েন্টি হইতে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটকে আর তাহাদের লক্ষ্য হিসাবে দেখেন না মর্মে অভিযোগ করিয়াছিলেন ঐ সিনিয়র ক্রিকেটার। প্রকৃত অর্থে, ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে লিগ বা টুর্নামেন্ট খেলিয়া যাহা উপার্জন করেন, তাহার তিন ভাগের এক ভাগও আয় করা যায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) কিংবা জাতীয় লিগ (এনসিএল) খেলিয়া। প্রতীকীভাবে বলা হয় যে, লাল বলে কষ্ট বেশি, উপার্জন কম! অর্থাত্ টেস্টের লাল বলের তুলনায় ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির সাদা বল অনেক বেশি অর্থ দিয়া থাকে।

কিন্তু সম্মান কি বেশি দেয়? কিংবা উলটা করিয়া বলা যায়, লাল বলের সম্মান হারাইলে সাদা বলের সম্মানেও কি আঁচড় পড়ে না? কেহ কেহ মনে করেন, আমাদের ক্রিকেটাররা বত্সরে গড়ে চার-পাঁচটা টেস্ট খেলিয়া থাকে।  যাহা বেশি খেলা হয় তাহা লইয়াই বেশি ভাবা হয়। কিন্তু কথা হইল, ইহা তো আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও সত্য। সুতরাং কোনো অজুহাতই এই ক্ষেত্রে যথার্থ নহে।

এই পরাজয় আমাদের জন্য যেন বিশেষ সতর্কতা হইয়া নূতন শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করিয়া দেয়। কোথায় খামতি, কোথায় বিচ্যুতি রহিয়াছে তাহা উপলব্ধি করিবার সুযোগ করিয়া দেয়। আশা করা যায়, আত্ম-অহমিকা কিংবা ক্রিকেট রাজনীতিতে ডুবিয়া না থাকিয়া টেস্টের ক্লাসিক জগতে আমরা সমীহযোগ্য স্থান অর্জন করিতে পারিব আগামী দিনে।