বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রক্ষণাবেক্ষণের অভাব

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রকট হইয়া উঠিতেছে। বিপুল অর্থব্যয়ে যে সকল প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, তাহা প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই বিধ্বস্ত হইয়া পড়িতেছে। এই বত্সরের শুরুতেই আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছিলাম, রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নাই আধুনিক ওয়ার্কশপ, প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ ও পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ টেকনিশিয়ান। মেরামতের অভাবে সংস্থাটির বিভিন্ন ডিপোতে অচল পড়িয়া আছে ৫২৪টি বাস। ফলে কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা দানে হিমশিম খাইতেছে সংস্থাটি। গত কয়েক বত্সরে অন্তত ২০টি রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ হইয়াছে। অনেক রুটে বাস চলাচল সীমিত করা হইয়াছে। জুন মাসে আমরা প্রতিবেদন করিয়াছি, দেশের ২ হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেলপথে ছোটো-বড়ো কালভার্ট-ব্রিজ রহিয়াছে ৩ হাজার ১৪৩টি। রেল কর্তৃপক্ষের বত্সরভিত্তিক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪০০ ব্রিজ-কালভার্ট এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্কারের অভাবে ঝুঁকি বাড়িতেছে। কিন্তু এসকল প্রতিষ্ঠানের কী কোনো উন্নতি হইয়াছে?

সড়ক-মহাসড়কের দিকে তাকাইলে আমাদের উপেক্ষা-অবহেলা আরো প্রকটভাবে চোখে পড়িবে। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, সড়ক অবকাঠামোর মান বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল নেপালের তুলনায় আগাইয়া আছে। অথচ সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে প্রতি বত্সরই মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করিয়াছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হিসাব বলিতেছে, গত নয় বত্সরে নূতন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে ৪৬ হাজার কোটির বেশি টাকা ব্যয় হইয়াছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবত্সরেও ব্যয় হইয়াছে ১৩ হাজার ৭০ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। একইসঙ্গে ঐ অর্থবত্সরে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। এই হিসাবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের জন্য সর্বশেষ অর্থবত্সরে প্রতি কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হইয়াছে! ফল কী ফলিয়াছে? মানসম্পন্ন সড়কের অভাব যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াইয়া তুলিয়াছে, ব্যবসায়-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়িতেছে। শিক্ষা-অবকাঠামোর দিকে তাকাইলেও একই চিত্র চোখে পড়িবে। শিক্ষাকে দেশ ও জাতির মেরুদণ্ড অভিহিত করা হইলেও ইহা সত্য যে সমগ্র দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থা অতি শোচনীয়, জরাজীর্ণ, দুর্দশাগ্রস্ত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার প্রথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর। তন্মধ্যে ১০ হাজার বিদ্যালয়ের অবস্থা শোচনীয়। রাজধানীতেও রহিয়াছে এই রকম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। এলজিইডির অধীনে নির্মিত ভবনগুলির স্থায়িত্ব ৫০ বত্সর ধরা হইলেও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাত্র ১৫-২০ বত্সরেই এগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন। তবে আশার কথা এই যে, সাড়ে ৫ হাজার বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে দেড় শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়াছে।

আমরা জানি, প্রতি বত্সর প্রতিটি এলাকার সরকারি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু বরাদ্দ থাকে। কোনো সড়কের একটু ক্ষতি হইলেই যদি মেরামত করা হইত, সরকারি ভবনে পলেস্তারা খসিয়া পড়িবার সঙ্গে সঙ্গেই যদি মনোযোগ পাইত, তবে নিঃসন্দেহে নির্মাণের কয়েক বত্সরের মধ্যেই তাহা জরাজীর্ণ হইত না। এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের সুযোগ রহিয়াছে। তাহারা কি এই ব্যাপারে নিশ্চেষ্ট থাকিতেছেন? প্রতি বত্সর সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাবিখার মতো বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দ থাকে। জরাজীর্ণ বিদ্যালয় বা ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের কাজে এই সকল বরাদ্দ ব্যয় করিতে তাহাদের কী সদিচ্ছার অভাব রহিয়াছে?