শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০২

মানসম্মত শিক্ষার নানা অনুষঙ্গ রহিয়াছে। তাহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হইল বিদ্যালয়ের পরিবেশ। শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাহিরের পরিবেশ একই সঙ্গে নির্মল ও স্নিগ্ধ হইতে হয়। বিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য মাঠ থাকাও অপরিহার্য, কারণ শিশু কিশোরদের শুধু মানসিক বিকাশ ঘটিলেই চলে না, একই সঙ্গে শারীরিক বিকাশও প্রয়োজন। সেই মোতাবেক আমাদের দেশের, বিশেষ করিয়া মফস্সল শহরগুলিতে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের সঙ্গে খেলার মাঠও রহিয়াছে। কিন্তু সেই খেলার মাঠের যথাপোযোগী ব্যবহার হইতেছে কি না সেই প্রশ্ন থাকিয়া যায়। যেমন, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে চার যুগ ধরিয়া চলিতেছে গবাদি পশুর হাট। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইহাতে বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পরিবেশের পাশাপাশি খেলাধুলার পরিবেশও নষ্ট হইতেছে। হাট রবিবারে বসিবার কারণে রবিবার অর্ধেক স্কুল হয়। তবে জানা যায়, ঐ দিন অর্ধেক স্কুল হইবার কথা বলা হইলেও আসলে কোনো ক্লাস হয় না। অভিভাবকরা হাটের দিন ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। এই বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে রহিয়াছে ক্ষোভ। বিদ্যালয়ের ফলাফলের উপর পড়িতেছে নেতিবাচক প্রভাব। গত কয়েক বত্সরের জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল পর্যালোচনা করিয়া দেখা গিয়াছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের আর্থিক সহযোগিতার নামে চলিতেছে এই হাটের কার্যক্রম। জেলা শিক্ষা অফিসার ছয় মাস পূর্বে পরিদর্শনে আসিয়া স্কুল কর্তৃপক্ষকে হাট বন্ধের নোটিশ দিলেও তাহা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয় নাই। জেলা শিক্ষা অফিসারের নোটিশ কেন কোনো কাজেই আসে নাই, বিষয়টি খতিয়ে দেখিতে হইবে। ইহার পিছনে স্থানীয় কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত কি না তাহা বিবেচনা করিতে হইবে। অভিভাবকদের অভিযোগ রহিয়াছে, একটি মুনাফালোভী চক্রের কারণে বন্ধ করা যাইতেছে না হাটটি।

হাটের দিন ২-৩ হাজার ছোটো-বড়ো পিকআপে প্রায় ৫ হাজার গরু-মহিষ আনা হয় এইখানে। এত গাড়ির কারণে গ্রামের ছোটো সরু রাস্তা দিয়া জনসাধারণের চলাচলের উপায় থাকে না। স্কুলের মাঠে পড়িয়া থাকা গরু-মহিষের গোবরে পরিবেশ দূষিত হয়। যাহা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হইয়াও পড়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মচারীদের সঙ্গে লইয়া হাটের হাসিলের টাকা তোলেন। আমাদের প্রশ্ন, একজন শিক্ষকের কাজ কি হাটের হাসিল তোলা? যেই সময়ে তাহাদের থাকিবার কথা শ্রেণিকক্ষে, ব্যস্ত থাকিবার কথা শিক্ষাদানে, সেই মূল্যবান সময়ে তাহারা থাকিতেছেন হাটে। ইহা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নহে। প্রধান শিক্ষকও স্বীকার করিয়াছেন যে, বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসা ঠিক নহে। আমরা আশা করি, বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটি এই ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের নোটিশটি আমলে লইয়া দ্রুত গবাদি পশুর হাটটি অন্যত্র স্থানান্তর করিবে। তাহা হইলেই বিদ্যালয়টি শিক্ষার একটি আদর্শ কেন্দ্রে পরিণত হইবে।