সারাদেশে চলিতেছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। নির্মিত হইতেছে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি। ইহাতে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও উন্নয়নমুখী মনোভাব ফুটিয়া উঠে। কিন্তু সর্বত্র সরকারের এই সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিতে দেখা যায় না। অনেক জায়গায় স্থানীয় পর্যায়ে বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকিয়া যাইতেছে। ইহার ফলে সার্বিকভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়িতেছে। তেমনই একটি সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে দৈনিক ইত্তেফাকে। জানা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধলবাড়িয়া-কলাপাড়া সড়কটি নির্মাণের এক মাসের মধ্যে ভাঙিয়া পড়িয়াছে। সড়কের কয়েক স্থানে পিচের সোলিং নষ্ট হইয়া তাহা খাদে পরিণত হইয়াছে। যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার না করিয়া, অপরিকল্পিতভাবে নিম্নমানের খোয়া ও অপর্যাপ্ত বালু দিয়া এবং খোয়া না দিয়া কাদার উপর বিটুমিন দিয়া রাস্তা নির্মাণ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। অথচ মাত্র এক মাস পূর্বে এই সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডিকে চিঠি দিয়া নির্মাণকাজ শেষ বলিয়া জানাইয়াছে। নির্মাণের এক মাসের মধ্যে সড়কের এই বেহাল দশা দেখিয়াই বুঝা যায়, ইহা যথাযথভাবে নির্মিত হয় নাই। নির্মাণকাজে ফাঁকি দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সড়ক নির্মাণের পর তাহা তো কর্তৃপক্ষকে বুঝাইয়া দেওয়ার কথা। তাহা হইলে তাহারা কি সঠিকভাবে বুঝিয়া লন নাই। স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রকৌশলী তাহা হইলে কী করিলেন? স্থানীয় প্রতিনিধিরাও এইক্ষেত্রে তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন নাই। তাহাদের কি উচিত নয় নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখা?
সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ আনিয়া ১৫ জন এলাকাবাসী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করিয়াছেন। জেলা প্রশাসক জরুরি ভিত্তিতে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন। তালা উপজেলার প্রকৌশলী জানান, দেড় বছরের ভিতরে কোনো রাস্তার সমস্যা হইলে ঠিকাদার তাহা মেরামত করিয়া দিবেন। সেই মোতাবেক সামনের শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি মেরামত করা হইবে। আমরা আশা করি, সড়কটি পুনরায় সঠিকভাবে নির্মিত হইবে। এইবার উপজেলা প্রকৌশলী ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ বুঝিয়া লইবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সার্বিকভাবে কাজ তত্ত্বাবধান করিবেন।
সাতক্ষীরার এই ঘটনা ব্যতিক্রম নহে; বরং সারাদেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এমন অনিয়ম প্রায়শ চোখে পড়ে। ইহাতে সার্বিকভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। উন্নয়নের এই ফাঁকফোকর বন্ধে সরকারকে আরো সক্রিয় হইতে হইবে। স্থানীয় প্রশাসনকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হইবে। বাড়াইতে হইবে জনপ্রতিনিধিদের নজরদারি। নিশ্চিত করিতে হইবে যেন কোনো পর্যায়ে দুর্নীতির সুযোগ না থাকিয়া যায়। স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি রোধে জনসাধারণকেও সচেতন হইতে হইবে। তাহলেই সম্ভব হইবে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন অব্যাহত রাখা।