শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রেনিটিডিন :সতর্কতার বিকল্প নাই

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০৬

নিয়ম-অনিয়মের মধ্যেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন চলিতে থাকে। শত নিয়মানুবর্তিতার মধ্যেও অনিয়মকে পুরোপুরি পাশ কাটানো যায় না কখনই। আর ‘শরীরের নাম মহাশয় যাহা সহাইবেন তাহাই সয়’—ইহা কথার কথা মাত্র। বরং দেহঘড়ির কোথাও ছন্দপতন ঘটিলে তাহার প্রকাশ ঘটিয়া থাকে নানান উপসর্গের মাধ্যমে। তেমনি একটি অতি সাধারণ উপসর্গ হইল—বুক জ্বালা-পোড়া কিংবা পেটে যন্ত্রণা, যাহাকে সাধারণ ভাষায় ‘গ্যাস্ট্রিক’-এর সমস্যা বলিয়া অভিহিত করা হয়। এই অতি প্রচলিত সমস্যাটির জন্য যে ঔষধটি অনেকেই নিয়মিত সেবন করিয়া থাকেন, তাহার নাম—রেনিটিডিন। আশঙ্কার কথা হইল, এই ঔষধটির সঙ্গে নাকি ক্যানসারের সম্পর্ক রহিয়াছে! গবেষণামূলক এমন প্রতিবেদনের পর বিশ্বের অনেক দেশ এই ঔষধটি বাজার হইতে তুলিয়া লইতেছে। বাংলাদেশও রহিয়াছে সেই তালিকায়।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) এক সতর্কতা জারির পর এই উদ্যোগ লইয়াছে বাংলাদেশ। আগাম সতর্কতা হিসাবে ইহা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ইহার পাশাপাশি এই ঔষধটি লইয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও তদন্ত শুরু করিয়াছে। জানা গিয়াছে, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং ইউরোপের ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি’ (ইএমএ) গত ১৩ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, তাহাদের পরীক্ষায় রেনিটিডিন ঔষধটিতে ‘এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলামিন’ (এনডিএমএ)-এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়াছে। উল্লেখ থাকে যে, এই এনডিএমএ নামের উপাদানটি মানুষের দেহে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করিতে পারে মর্মে সন্দেহ করা হয়। তবে পানি, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শাকসবজিসহ আরো অনেক খাবারেই ‘এনডিএমএ’ রহিয়াছে স্বল্পমাত্রায়। অবশ্য খুবই স্বল্পমাত্রায় ‘এনডিএম’ মানুষের শরীরে সেইরকম কোনো সমস্যা তৈরি করে না। সমস্যা হয় ইহার মাত্রা বেশি হইলেই। আর এই কারণেই রেনিটিডিন ঔষধটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলিয়া মনে করা হইতেছে নূতন গবেষণায়।

তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘রেনিটিডিন’ জাতীয় সব ধরনের ট্যাবলেটেই যে ক্যানসার তৈরির উপাদান রহিয়াছে—বিষয়টি এমন নহে। তাহা ছাড়া এই ঔষধটা নিজে ক্যানসার তৈরি করে না। এবং সেবনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ঘটিবে, তাহাও নহে। তবে রেনিটিডিনের কাঁচামাল উত্পাদনের সময়, কিছু কাঁচামালের একটি মিশ্রণে ক্যানসারের ঝুঁকিযুক্ত কোনো উপাদান তৈরি হইয়াছে। বিশ্বের বহু ল্যাবেই ইহার কাঁচামাল তৈরি হয়। এবং বলা হইতেছে যে, সকল কাঁচামাল উত্পাদকের ক্ষেত্রে ইহা ঘটে নাই। পত্রিকান্তরে জানা গিয়াছে, বাংলাদেশ প্রধানত যেই দুইটি ল্যাব হইতে রেনিটিডিন ঔষধের কাঁচামাল আমদানি করিয়া থাকে, সেই দুইটি ল্যাবের কিছু নমুনায় ‘কারসিনোজেনিক’ উপাদান তথা ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান পাওয়া গিয়াছে। সেই কারণে গত রবিবার বাংলাদেশের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেনিটিডিনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে। একই সঙ্গে এই ঔষধটির মধ্যে সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান রহিয়াছে কি না—তাহাও তদন্ত করিয়া দেখা হইতেছে।

আপাতত সতর্কতার বিকল্প নাই। এই বিষয়ে পরবর্তী গবেষণা প্রতিবেদন পাইবার পূর্বে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বাংলাদেশে ঔষধটির বিক্রেতারা যাহাতে ইহা বিক্রয় করিতে না পারে, সেই ব্যাপারে বিশেষ পর্যবেক্ষণ রাখা জরুরি। এইসঙ্গে অকারণ আতঙ্ক সৃষ্টি যাহাতে না হয়, সেই দিকেও খেয়াল রাখিতে হইবে।