শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খোলাবাজারে জব্দ বন্ডের কাপড়

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৪

দেশের শিল্প খাতকে বেগবান করিতে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের আওতায় রপ্তানিমুখী খাতকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা বন্ড সুবিধা প্রদান করা হয়। ইহাতে কোনো শুল্ক ছাড়াই কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পাইয়াছে দেশের রপ্তানি খাত। শর্ত একটাই যে, কাঁচামালে তৈরি পণ্য শতভাগ রপ্তানি করিতে হইবে। এই সুবিধার সবচেয়ে বড়ো উপকারভোগী তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বন্ডের কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রয়ের খবর বারবার আসিয়াছে দৈনিক পত্রিকায়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আনিয়া তাহা বিক্রয় করিতেছে খোলাবাজারে। ইহার ফলে সরকার একদিকে মূল্যবান রাজস্ব হইতে বঞ্চিত হইতেছে, পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্প উত্পাদন কমিয়া যাইতেছে। কিছুদিন পূর্বে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হইয়াছে কালোবাজারির নিত্যনূতন কৌশল লইয়া একটি প্রতিবেদন। তাহার পূর্বে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার আওতায় পণ্য আনিয়া কালোবাজারে বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৬৬টি গার্মেন্টস কারখানাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক চিহ্নিত করিবার খবর দৈনিক পত্রিকায় আসিয়াছিল। এইবার আসিয়াছে ইসলামপুরে বন্ডের কাপড় খোলাবাজারে বিক্রয়, জব্দ ও ফৌজদারি মামলা দায়েরের খবর। মামলাটি করিয়াছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। দি কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর বিধান মোতাবেক এই মামলা দায়ের করা হইয়াছে। ইহাতে শুল্ক-করাদি ফাঁকি ও বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল/পণ্য আমদানি, সরবরাহ, মজুত এবং বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানসমূহকে আসামি করা হইয়াছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ ইতিমধ্যেই তত্পরতা শুরু করিয়াছে বলিয়া জানাইয়াছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গিয়াছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিনরাতব্যাপী অভিযান চালাইয়া বন্ডেড চোরাই ফেব্রিকসের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ইসলামপুর এলাকা থেকে ৩০ ট্রাক ফেব্রিকস আটক করা হইয়াছে। ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত আল ইসলাম কমপ্লেক্স এবং শুভরাজ টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে মোট সাতটি গোপন গুদামে বিপুল পরিমাণ বন্ডেড চোরাই ফেব্রিকস মজুত পাওয়া গিয়াছে—যাহা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প কর্তৃক বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে আমদানিপূর্বক রপ্তানিতে ব্যবহারের পরিবর্তে অবৈধভাবে চোরাই বাজারে বিক্রয় করিয়া দেওয়া হইয়াছে। অভিযানে প্রায় ১১০ টন উন্নত মানের শার্টিং, সুটিং, পর্দার কাপড় জব্দ করে কাস্টমস গুদামে জমা প্রদান করা হইয়াছে। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এই খোলাবাজারে বিক্রয়ের সহিত জড়িতরা অতিসত্বর ধরা পড়িবে বলিয়া আমরা আশা করি। পাশাপাশি এই ধরনের চোরাই বিক্রয়ের সহিত জড়িত অন্যান্য সকলকে আইনের আওতায় আনিতে হইবে। কারণ এক হিসাবে, এমনিতেই বত্সরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সরকার বন্ডেড কাঁচামাল আনিতে শুল্ক ছাড় দিতেছে—যাহার প্রধান খাত তৈরি পোশাক। ফলে এই কাঁচামাল যদি শিল্পে ব্যবহূত না হইয়া খোলাবাজারে বিক্রয় হয়, তাহা হইলে ক্ষতি দেশের শিল্প খাতের; কেবল কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর লাভ তাহাতে। ফলে যে কোনো মূল্যে, খোলাবাজারে বন্ডেড কাঁচামাল বিক্রয় বন্ধ করিতে হইবে।