শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ২১:২৩

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র বেনাপোল স্থলবন্দর। বেনাপোল হইল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম যাহা যশোরের শার্শা উপজেলায় অবস্থিত। এই বন্দর দিয়া ভারতের সহিত যোগাযোগের বিশেষ সুবিধা রহিয়াছে। কেননা বেনাপোল হইতে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। বর্তমানে দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয়, তাহার ৭০ শতাংশ আসে বেনাপোল দিয়া। এই পথে বত্সরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়, যাহা হইতে রাজস্ব বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু গত ছয় বত্সর হইতে দেশের প্রধান এই স্থলবন্দরটির রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ও প্রবণতা লক্ষ করা যাইতেছে। ইহার প্রধান কারণ, এই বন্দরটির প্রত্যাশিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো হয় নাই। সাম্প্রতিক কিছু উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ গ্রহণ করা হইলেও তাহা পর্যাপ্ত নহে। বিশেষ করিয়া আজ হইতে ৪৭ বত্সর পূর্বে দেশের সর্ববৃহত্ এই স্থলবন্দরের যাত্রা শুরু হইলেও এখনো এইখানে পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগার তৈরি করা হয় নাই। প্রতিষ্ঠিত হয় নাই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন তথা বিএসটিআই ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা বিসিএসআইআরের কোনো শাখা। ইহাতে খাদ্যদ্রব্যসহ অনেক পণ্যই যথাসময়ে পরীক্ষা করা যায় না। সীমিত পর্যায়ে কিছু পণ্যের পরীক্ষণ শুরু হইয়াছে বটে, তবে তাহা একেবারে অপর্যাপ্ত।

বিদেশ হইতে আমদানিকৃত যে কোনো পণ্য বন্দরে খালাসের আগে তাহার পরীক্ষণ বাধ্যতামূলক। চট্টগ্রাম বন্দরে এই সুবিধা রহিয়াছে; কিন্তু বেনাপোল বন্দরে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নাই। অথচ এই বন্দর দিয়া বত্সরে বিভিন্ন ধরনের সাড়ে তিন শতাধিক পণ্য আমদানি করা হয়। তাহার মধ্যে খাদ্যের কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প কলকারখানার কেমিক্যাল জাতীয় ৫৫টি পণ্য রহিয়াছে, যাহার পরীক্ষণ সার্টিফিকেট ছাড়া খালাস করা যায় না। এইরূপ কয়েকটি পণ্যের পরীক্ষণের জন্য ছুটিতে হয় খুলনা কিংবা ঢাকা। ইহাতে ১৫ হইতে ২০ দিন আবার কখনো কখনো এক মাস সময়ও লাগিয়া যায়। এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকৃত অনেক পণ্য দিনের পর দিন বন্দরে পড়িয়া থাকে। ইহাতে অনেক সময় পণ্যমান নষ্ট হইয়া যায়। বিশেষ করিয়া খাদ্যদ্রব্য ও শিশুখাদ্যের ক্ষেত্রে এই কথা আরো প্রযোজ্য। একই সঙ্গে আমদানিকৃত পণ্য বন্দর শেডে বা ট্রাকে করিয়া রাখার কারণে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হইতে হয় ব্যবসায়ীদের। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ইহাও অন্যতম কারণ। তাই এই ব্যাপারে কেন নজর দেওয়া হইবে না?

একটি দেশে স্থল, নৌ-সমুদ্র ও বিমানবন্দরের গুরুত্ব সর্বাধিক। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিকাশ ও ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে বিভিন্ন বন্দরের উন্নয়ন আগে দরকার। এইক্ষেত্রে বিনিয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হইয়া থাকে। ইহা জানা সত্ত্বেও প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরিয়া দেশের প্রধান স্থলবন্দরে পণ্য পরীক্ষণের শতভাগ ও নিজস্ব সুবিধা থাকিবে না, তাহা কী করিয়া ভাবা যায়? অতএব, আমরা এই বন্দরে অবিলম্বে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের শাখা স্থাপনের জোর দাবি জানাই।