বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিরিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান বদল

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৫৬

গোলযোগপূর্ণ সিরিয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার অবস্থান বদল করিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইপ এরদোগানের সহিত রবিবার এক টেলিফোন আলাপের পরে তুরস্ক সীমান্তসংলগ্ন সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব একপ্রকার তুরস্কের হাতেই তিনি ছাড়িয়া দিয়াছেন বলা চলে। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে উল্লিখিত অঞ্চলটি হইতে আমেরিকান সৈন্যরা চলিয়া যাইবে এবং অত্রস্থলে বন্দি অবস্থায় থাকা কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধার দায়িত্ব তুর্কি বাহিনী বুঝিয়া লইবে। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, সিরিয়াতে চলমান ‘চূড়ান্ত বিরক্তিকর অবিরাম’ এই যুদ্ধের সহিত আমেরিকা আর জড়িত থাকিবে না।

সিরিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষকদের বেশির ভাগ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বলিতে গেলে হতবাক হইয়া পড়িয়াছেন। উল্লেখ্য, এত দিন ধরিয়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে কুর্দি বাহিনী আমেরিকানদের সহিত হাতে হাত মিলাইয়া লড়াই করিয়াছে। আইএসের পরাজিত সেনাদিগকে বন্দি রাখিবার গুরুদায়িত্বও পালন করিয়াছে কুর্দিরা। এইদিকে তুরস্ক আবার কুর্দিদিগকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করিয়া থাকেন। এমতাবস্থায়, আমেরিকা কর্তৃক হঠাত্ করিয়া পরিত্যক্ত হইবার কারণে কুর্দিরা যে একধরনের নিরাপত্তাসংকটের মধ্যে পড়িয়া যাইবে তাহা বলাই বাহুল্য। কুর্দি নেতৃত্ব ট্রাম্পের ঘোষণাটিকে ‘পিছন হইতে ছুরিকাঘাত’ হিসাবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, কুর্দিরা এইবার এতদিনকার শত্রু হিসাবে পরিগণিত সিরিয়ার ক্ষমতাসীন বাশার আল আসাদের শিয়া সরকার ও শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের সহিত নূতন করিয়া সম্পর্ক রচনার দিকে অগ্রসর হইতে পারে। তেমন কিছু ঘটিলে সিরিয়ার পরিস্থিতি নূতন করিয়া অশান্ত হইয়া উঠিবার সমূহ আশঙ্কা আছে বলিয়াই মনে করা হইতেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগে সিরিয়া ও ইরাকে পরাজিত আইএস নূতন করিয়া জাগিয়া উঠিতে পারে বলিয়াও মনে করা হইতেছে। এইদিকে, তুরস্কের লক্ষ্য হইতেছে সিরিয়ার সীমান্তে একটি ‘সেইফ জোন’ প্রস্তুত করা। এই জোনের ভিতর দিয়া তুরস্কে শরণার্থী হিসাবে অবস্থানরত সাড়ে তিন মিলিয়নের অধিক সিরীয় নাগরিকের মধ্যে অন্তত ২ মিলিয়নকে নিজ দেশে প্রেরণ করিতে চাহে আঙ্কারা। এই ঘোষিত উদ্দেশ্যের বাহিরে কুর্দি বাহিনীকে শায়েস্তা করাও এরদোগানের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য বলিয়া মনে করা হইতেছে। উল্লেখ্য, স্বায়ত্তশাসন পাইবার লক্ষ্যে তুরস্কের কুর্দিরা গত তিন দশক যাবত্ লড়াই করিতেছে।

ট্রাম্প ইতিপূর্বে একাধিকার আমেরিকান বিদেশনীতির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত, এমনকি নিজ প্রশাসনের বিশেষজ্ঞদের কথাবার্তা আমলে না লইয়াই নিজের বিচার-বুদ্ধিকে সম্বল করিয়াই অগ্রসর হইয়াছেন। উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরানের ক্ষেত্রে আমেরিকান নীতির টালমাটাল অবস্থান হইতেছে ট্রাম্পের একক কর্মকাণ্ডের সাক্ষাত্ প্রমাণ। তাহার নীতিমালা এই দেশগুলির কোনটির জন্য মঙ্গল বহিয়া আনে নাই। এমনকি আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের অনুকূল হইয়াছে বলিয়াও তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। পর্যবেক্ষকরা মনে করিতেছেন যে, সিরিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের নূতন অবস্থানটিও অন্যান্যবার অপেক্ষা তেমন কোনো ব্যতিক্রম হইবে না। লক্ষ করিবার মতো বিষয় একটিই যে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত লইতেছেন এককভাবে কিন্তু তাহার পরিণতি ভোগ করিতেছেন অগণিত মানুষ।