শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভূমি বিষয়ে হটলাইন সেবা

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৮

 ‘ভূমি বিষয়ে সেবা মিলবে হটলাইনে’—১৩ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই শিরোনামের সংবাদটি পাঠ করিলে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বস্তি বোধ করিতে পারেন। অবশ্য ইহা স্বস্তি বোধ করিবার মতো সংবাদই বটে।  জানা গিয়াছে, ভূমি সেবা হটলাইন ১৬১২২-এ ফোন করিলেই সেবাগ্রহীতা সকল জটিলতার আইনগতভাবে নিরসনের সহযোগিতা পাইবেন। ইহা উদ্বোধনের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার চালু করা হইয়াছে। সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে সকাল ৯টা হইতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই সেবা প্রদান করা হইবে।

 গোটা দেশে যেই সমস্যাটি সবচাইতে তীব্র তাহা হইল ভূমিবিষয়ক বিবাদ, সংঘর্ষ ও মামলা-মোকাদ্দমা। দেশে ১০ লক্ষাধিক মামলা রহিয়াছে ভূমি বিবাদ লইয়া। পত্রিকান্তরে সংবাদ হইতে জানা গিয়াছে, দেশে যত ফৌজদারি মামলা রহিয়াছে তাহারও ৮০ শতাংশ ভূমিকে কেন্দ্র করিয়া। দেশে খুনখারাবির মতো বেশির ভাগ ঘটনা ঘটিতেছে এই ভূমি ঘিরিয়া। এখনো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মামলা রুজু হইতেছে এই ভূমিকে কেন্দ্র করিয়াই। ভূমি বিষয়ক এইসব মামলা এক পুরুষের সময় শুরু হইয়া পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত গড়াইয়া যায়। তাহার পরও কোনো সুরাহা হয় না। সুতরাং ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে ভূমি লইয়া বিরোধের ক্ষেত্রে হটলাইন সুবিধা নিঃসন্দেহে একটি বড়ো উদ্যোগ। ইহা সঠিকভাবে চালু থাকিলে মানুষের ভোগান্তি কমিতে বাধ্য। 

কেবল ভূমি লইয়া হটলাইন নহে, আমরা আশা করিতেছি ভূমিবিষয়ক যাবতীয় সেবা সরকার যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটালাইজেশনের আওতায় লইয়া আসিবে।  অর্থাত্ সেবা বলিতে ভূমি রেকর্ড, ভূমি মালিকানাসহ সকল তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্তি করা; ভূমি উন্নয়ন কর, নামজারি, রিটার্ন বাতিল বা দাখিল, ইজারা প্রদান, ইজারা হস্তান্তরসহ যাবতীয় বিষয় অনলাইনে চলিয়া আসিবে। নিঃসন্দেহে কাজটি সহজ নহে। গোটা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় জট পাকাইয়া আছে। আমরা জানি, সেই ব্রিটিশের সময় হইতেই ভূমি অফিসগুলিতে দালালচক্র, অসত্ কর্মচারীদের আখড়ায় পরিণত হইয়া আছে। নকশা, খতিয়ান, এসএ পর্চা, আরএস রেকর্ড সর্ববিষয়ে অনিয়ম দানা বাঁধিয়া আছে।  দেশব্যাপী সরকারি জমি ব্যক্তির নামে, ব্যক্তির জমি সরকারের নামে রেকর্ড হইয়া আছে। অধিকন্তু অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, ওয়াকফ সম্পত্তি লইয়া আছে নানা রকমের জটিলতা। এই সকল বিড়ম্বনা হইতে দেশবাসী মুক্তি চাহে।  আরো সমস্যা রহিয়াছে। যেই সকল ভূমি লইয়া মামলা রহিয়াছে, ডিসপুট রহিয়াছে তাহার তথ্য কী হইবে? পাশাপাশি ইহাও মনে রাখিতে হইবে, অনলাইনেও দুর্নীতি হইবে না তাহার নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং কেবল ডিজিটাল করিলেই চলিবে না, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করিতে হইবে। আমরা জানি, ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ই-সেবা চালু হইয়াছে। ইতোমধ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করিয়াছে। কয়েক কোটি খতিয়ান, মৌজার ইলেকট্রনিক রেকর্ড করা হইয়াছে। এইসব অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানাইতেই হয়। সর্বোপরি ভূমিসেবা পুরোপুরি ডিজিটাল করিতে পারিলে দেশে ভূমি সমস্যার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসিবে বলিয়া আমরা মনে করি।