শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্ধবেকার এবং জনমিতিক লভ্যাংশের হিসাব

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩১

বর্তমানে দেশের জনসংখ্যায় কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠীর আধিক্য রহিয়াছে। কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠী বেশি থাকিলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি হয়—যাহাকে বলা হয় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ। তবে নানান তথ্য-উপাত্ত বলিতেছে, আমাদের যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হইতেছে না। ‘স্টাডি অন এমপ্লয়মেন্ট প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড সেক্টরাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাইতেছে না ১ কোটি ৩৯ লক্ষ শ্রমশক্তি। ইহাদের বলা হইতেছে আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকার। দেশে এই অর্ধবেকারদের ৭০ শতাংশেরই বয়স ৩০ হইতে ৬৪ বত্সরের মধ্যে। ইহা যেমন দুরবিনের একটি দিক, তেমনি অন্য দিক হইতে দেখিলে বোঝা যায়, দেশের শিক্ষিত বেকারদের শিক্ষাসনদ আছে বটে, কিন্তু বৃহত্ একটি অংশের শিক্ষা মানোপযুক্ত নহে। দক্ষতার অভাবও প্রকটভাবে দৃশ্যমান। দেখা যায় যে, অনেকেই চাকুরির দরখাস্ত অবধি ঠিকঠাকমতো লিখিতে জানেন না। চাকুরিদাতারা এমন কথিত শিক্ষিতদের দিয়া অনেক ক্ষেত্রেই তাহাদের প্রয়োজনীয় কাজটি যথাযথভাবে করাইতে পারেন না। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে পরিস্থিতিটা এইরকম যে—লোক বলে কাজ কোথায়, আর কাজ বলে লোক কোথায়? অর্থাত্ চাকুরির বহু ক্ষেত্রেই চাহিদা অনুযায়ী দেশে দক্ষ লোকের অভাব রহিয়াছে।

সুতরাং বেকার বাড়িতেছে, তাহার ভিন্ন একটি অর্থও রহিয়াছে। ইহার অর্থ এইভাবেও বিশ্লেষণ করা যায় যে, নিম্ন মানসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ফি বত্সর বাড়িতেছে—যাহারা চাকুরি ভিন্ন আর কিছু করিবার কথা ভাবিতে পারেন না। প্রথাগত চাকুরি ও প্রচলিত ছকে বাঁধা পথে চলিবার মানসিকতাই ইহার জন্য দায়ী। পরিবর্তন দরকার এই মানসিকতার। অতএব শিক্ষিত যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে হইবে সর্বাগ্রে। বিশেষ করিয়া কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। কারণ, এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করিতে পারিলে উদ্যোক্তা হইবারও আত্মবিশ্বাস অর্জন করিতে পারিবে তাহারা। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বৃদ্ধি পাইবে আউটসোর্সিংয়ের গতি। মনে রাখিতে হইবে, প্রত্যেকেই তাহার স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী কিছু একটা করিবার ক্ষমতা রাখেন। সুতরাং বেকারত্বের সমস্যাটিকে তাই একরৈখিকভাবে দেখিলে চলিবে না। মনে রাখিতে হইবে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড একটি দেশের জন্য অত্যন্ত বিরল একটি সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগকে কাজে লাগাইতে না পারিলে তাহা উদ্বেগ হইয়া দেখা দিবে। যুব জনসংখ্যার এই আধিক্যকে সর্বতোভাবে কাজে লাগাইবার জন্য প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা ও তাহার বাস্তবায়ন। আমরা মনে করি, ‘স্টাডি অন এমপ্লয়মেন্ট প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড সেক্টরাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা প্রতিবেদনটিতে নমুনা জরিপের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের যেই সকল দিক উঠিয়া আসিয়াছে তাহা দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান লইয়া জাতীয় পরিকল্পনা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিবে। বিশেষ করিয়া আগামী ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ইহার প্রতিফলন আশা করা যাইতেই পারে।