শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুক্ত সাংবাদিকতার দাবিতে প্রতিবাদ

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৬

সোমবার সকালে ঘুম হইতে জাগিয়া পত্রিকা হাতে লইয়াই অস্ট্রেলিয়ার পাঠকরা দেখিলেন, সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় কেবল কালির আঁচড়! একপাশে কালো কালির উপর লাল সিলমোহর আঁকিয়া তাহার মধ্যখানে  লিখিয়া দেওয়া হইয়াছে ‘সিক্রেট’, এবং তাহার চারিপাশে ঘুরাইয়া লেখা হয় ‘নট ফর রিলিজ’। ইহা ছিল অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি তিরস্কার। নিশ্চয়ই পাঠকদের বুঝিতে বাকি রহিল না, সংবাদপত্র এই কাজ করিয়াছে প্রতিবাদ জানাইতে। মুহূর্তেই এই সংবাদ সারা বিশ্বে ছড়াইয়া পড়িল। প্রশ্ন হইল, কী সেই প্রতিবাদ, কেনই-বা প্রতিবাদ? সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের বাক্স্বাধীনতার প্রশ্নে বিভিন্ন দেশে সরকারের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ রহিয়াছে। কোনো কোনো দেশের সংবাদমাধ্যমকে তাহা বিমর্ষচিত্তে একরকম মানিয়া লইতে হয়। আবার কোনো কোনো দেশ গুনগুন করিয়া, অস্ফুট আর্তনাদ করিয়া থাকে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি অগ্রগামী দেশের শক্তিশালী গণমাধ্যম সরকারের কোনো অধিকার হরণনীতি মানিবে কেন?  তাই সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রিন্ট সংস্করণের সব পত্রিকা প্রথম পাতার লেখা কালো কালি দিয়া মুছিয়া প্রতিবাদ জানাইয়াছে। তাহাদের সঙ্গে এই প্রতিবাদে সমর্থন জানাইয়াছে অনলাইন পত্রিকা এবং দেশব্যাপী ছোটো ছোটো আঞ্চলিক পত্রিকাগুলিও। 

অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনা এক দিনের কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া নহে। দীর্ঘকাল ধরিয়া অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদপত্র মালিকেরা সরকারের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হইয়াছিলেন। ২০০২ সাল হইতে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট নিরাপত্তাবিষয়ক ৮০টি আইন পাশ করিয়াছে। উহার মধ্যে রহিয়াছে সরকারের গোপনীয়তা সম্পর্কে একটি আইন, যাহা সাংবাদিক সমাজকে অধিক ক্ষুব্ধ করিয়াছে। তাই অস্ট্রেলিয়াব্যাপী সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলিয়াছেন, ‘সরকার আপনার নিকট হইতে সত্য ধামাচাপা দিয়া কী লুকাইতে চাহিতেছে?’

সম্প্রতি দুইটি ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকসমাজকে ফুঁসিয়া উঠিতে সাহায্য করিয়াছে। অনিকা স্মেটহার্স্ট নামের একজন নারী সাংবাদিক রিপোর্ট করিয়াছেন, ‘সরকার নুতন করিয়া সাংবাদিক সমাজের উপর গুপ্তচরবৃত্তির চিন্তা করিতেছে।’ ইহার পর ঐ সাংবাদিকের অফিসে এবং বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অস্ট্রেলিয়ার বহুল প্রচারিত এবিসি একটি সংবাদে বলিয়াছে, ‘অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে শিশু এবং বেসামরিক নাগরিক হত্যার সঙ্গে জড়িত।’ ইহার পর এবিসির সদর দপ্তরেও অভিযান চালানো হয়। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম সহযোগী দেশ। অস্ট্রেলিয়ার প্রচারমাধ্যমগুলি বলিয়াছে, ‘প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও সাংবাদিকদের সত্য উচ্চারণের অধিকারে সরকার কর্তৃক হস্তক্ষেপের  বিরুদ্ধে ইহা আমাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ।’ মানুষ, পেশাজীবী সম্প্রদায় একত্র হইয়া থাকে কোনো আদর্শের উপর ভিত্তি করিয়া। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রতিবাদ সেইসব দেশের  সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি দৃষ্টান্ত, যেই সব দেশের সংবাদমাধ্যম তাহাদের মূল নীতিমালায় একত্র থাকিতে পারে না। সেই সঙ্গে এই ধরনের প্রতিবাদের জন্য যে নৈতিক মনোবলের প্রয়োজন তাহার ঘাটতিও অনেক দেশের কিছুসংখ্যক সংবাদকর্মী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিলক্ষিত হইয়া থাকে। সর্বোপরি সাংবাদিকতার মহান পেশা দেশে দেশে বিকশিত হউক, সরকারগুলিও সাংবাদমাধ্যম বান্ধব হইয়া উঠুক, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।