শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খাতুনগঞ্জে ভাগাড়ে যাচ্ছে বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ!

পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যে ক্রেতারা অসহায়

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৪৯

পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যে দেশ জুড়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। পরের দিন দাম কমবে, নাকি স্থির থাকবে, নাকি বাড়বে—এসব এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘাটতির কারণে এই দাম বাড়ছে। অথচ চট্টগ্রামের  খাতুনগঞ্জে আসা মিয়ানমারের পেঁয়াজ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পেঁয়াজের ঘাটতি থাকলে তা বাজারে না ছেড়ে কেন পচানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না।

অপরদিকে, এই নিত্যপণ্যের দাম কারসাজির বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও অভিযান চালিয়েছে মোবাইল কোর্ট। আদায় করা হয়েছে জরিমানা। কিন্তু তার পরও দাম কমার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কোথাও বিক্ষোভও হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা এ তথ্য দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, খাতুনগঞ্জে পচা পেঁয়াজ বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বেশি সময় ধরে বস্তায় মজুত থাকার কারণে এসব পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কিছু মজুতদার বাড়তি দামের আশায় পেঁয়াজ গুদামে মজুত করে রাখায় তা পচে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শুক্রবার রাতে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, পাশের চাকতাই খালের ধারে কে বা কারা বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ ফেলে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা এগুলো ময়লার গাড়িতে তুলে ভাগাড়ের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার নিম্ন আয়ের অনেককে এসব থেকে দুই-চারটি বেছে নিতেও দেখা গেছে।

এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী খলিল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খলিল উল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, এসব পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি করা। দীর্ঘদিন বস্তায় থাকার কারণে এগুলো পচে গেছে। তবে এসব পেঁয়াজের মালিক কে, সে বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর জানান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসতে অন্তত ৭-১০ দিন সময় লাগে। এসব পেঁয়াজ ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় অনেক নিম্নমানের। সে কারণে গরমে এগুলো নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে ১০০ বস্তার বেশি পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদ আলম ইত্তেফাককে জানান, গত কয়েক দিন ধরে রাতে ময়লার ভাগাড়ে প্রায়ই পচা পেঁয়াজের বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর পাড়েও বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। খাতুনগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কিছু  মৌসুমি ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় অল্প কিছু পেঁয়াজ মজুতের চেষ্টা করছেন। এদের কিছু পেঁয়াজও নষ্ট হচ্ছে।

চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে পেঁয়াজ পচলে ব্যবসায়ীদের খুব বেশি ক্ষতি নেই। কারণ যে পরিমাণ পেঁয়াজ পচবে, তার ক্ষতি পোষাতে ভালো পেঁয়াজের দাম বাড়াতে থাকবে তারা। এখন প্রতিদিন পচা পেঁয়াজ আড়ত থেকে বের হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এসব অসত্ আড়তদারকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।

বিক্ষোভ-মানববন্ধন :এদিকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গাইবান্ধায় গতকাল শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির গাইবান্ধা জেলা কমিটি। দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের ১ নম্বর রেলগেটে সিপিবির জেলা কার্যালয় চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। একই কারণে রাজশাহী মহানগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার আয়োজনে গতকাল শনিবার সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করার দাবি জানানো হয়।

অভিযান :বরিশালে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (মিয়ানমার) ২২০ টাকা কেজি দরে এবং খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে জনসাধারণের। এ অবস্থায় দাম স্থিতিশীল রাখতে বরিশালে পেঁয়াজের প্রধান মোকাম পেঁয়াজপট্টিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবালের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজের ক্রয়-বিক্রয় মেমো যাচাই করেন। মূল্যতালিকায় অসংগতি থাকায় বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়কে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অপরদিকে, কুষ্টিয়ায় এসপির অভিযানে পেঁয়াজ বাজারের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে। গতকাল সকালে শহরের পৌর বাজারে পেঁয়াজের দর তদারকিতে মাঠে নামেন কুষ্টিয়ার এসপি এস এম তানভীর আরাফাত। তাত্ক্ষণিক পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে আসে।

এছাড়া একই দিন খুলনায় অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অভিযোগে মো. হযরত আলী নামের এক ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরীর বড়ো বাজারে এই অভিযান চালানো হয়। একই অপরাধে গতকাল মাদারীপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ দোকানিকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করে।

বাঘায় মজুত :বাঘা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানিয়েছেন,  দেশব্যাপী যখন পেঁয়াজের বাজারে আগুন, তখন রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় একটি চক্র বাড়িতে পেঁয়াজের মজুত গড়েছে। ফলে এ অঞ্চলে পেঁয়াজের দাম ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকায় ঠেকেছে।  স্থানীয় লোকজনসহ উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী অঞ্চলে যে সমস্ত এলাকায় পেঁয়াজ উত্পাদন হয়ে থাকে, তার মধ্যে  বাঘা উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় হাটের সবচেয়ে বড়ো সবজি ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল বাউসা ও আড়ানী ইউনিয়নের অনেকে তাদের ঘরে বিপুল পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছেন।  প্রশাসনের লোকজন যদি ঐ সব বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করে, তবে বাজার খানিকটা স্থিতিশীল হবে।