বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৫৮

গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, লবণ প্রভৃতির সংকটের অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এটা করবে আমি জানি, এটা স্বাভাবিক। কাজেই সেটাকে মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে, আমরা সেভাবেই চলছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে আমরা দেখি, অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। আমি সবাইকে একটা কথা বলব, এই অপপ্রচারে কান দেবেন না। দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পেঁয়াজ, লবণ এবং চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সাম্প্রতিক অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার মহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর                 দেশপ্রেমিক সদস্যরা দেশমাতৃকার নানাকাজ যেমন: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৯ উপলক্ষ্যে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মাছ এবং সবজিসহ বিভিন্ন তরিতরকারির উত্পাদন বৃদ্ধি করেছে এবং এখন জনগণের নিরাপদ খাদ্য এবং পুুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানবে বাঙালি জাতি কখনো হারতে জানে না। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের আত্মমর্যাদার ধারণা তৈরি হবে এবং তারা মাথা উঁচু করতে চলতে শিখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছিল, কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে তা আবার হারিয়ে ফেলে এবং দেশটি একটি হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের দেশে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সে সময় ১৯টি ক্যু সংঘঠিত হয়েছিল এবং সশস্ত্র বাহিনীর বহু সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধ্বংস করার এবং জাতির পিতার নামকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আমরা আবারও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে ফিরিয়ে এনেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং খেতাব জয়ী সশস্ত্রবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সম্মানীর চেক এবং উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের হাতে ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ এবং নয় জন সেনাসদস্য, দুজন নৌবাহিনীর সদস্য এবং তিন জন বিমান বাহিনীর সদস্যের হাতে শান্তিকালীন ‘বাহিনী পদক’ তুলে দেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং উচ্চপদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

‘নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশ গড়ায় কাজ করুন’

বিকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশেপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসুন সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। তিনি বলেন, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। নিজেরা নিজের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। কাজেই সবাই যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজেদের দেশকে গড়ে তুলতে কাজ করবেন সেটাই আমি চাই। সশস্ত্র বাহিনী সর্বাবস্থায় সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, সব সময়, সর্বাবস্থায় চেইন অব কমান্ড মেনে ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে তার ভূমিকা রেখে যাবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি, গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে অবদান রাখবে। সন্ত্রাস-মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যদি শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তাহলে অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী, অগ্রগতি হতেই হবে। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দেশকে আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বাজেট আমরা বাড়িয়েছি। সবার বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। অন্য অনেক সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রসারিত ও পুনঃনির্মিত সেনাকুঞ্জ উদ্বোধন করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহিদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৯’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসের ‘শিখা অনির্বাণে’ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে এই শ্রদ্ধা জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফ্ফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান, যেখানে তিন বাহিনী প্রধানগণ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন।