শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রণাঙ্গন আর জাতিসংঘ যুদ্ধ চলছিল দুই জায়গায়

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৩০

মুক্তিযুদ্ধের এই দিন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনমনীয়, তেজি অগ্রগতির কাছে সমস্ত বাধাই তখন তুচ্ছ। একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর থেকেই বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। সে খবর ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে, সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরো দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।    ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী যখন ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যৌথ আক্রমণে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন সম্মুখসমরে তো বটেই আন্তর্জাতিকভাবেও পায়ের তলার মাটি হারাচ্ছিল পাকিস্তান। রণাঙ্গনে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আরেক যুদ্ধ চলছিল জাতিসংঘে। বাংলাদেশের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে।

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তখন দারুণ উত্তেজনা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ (জর্জ ডব্লিউ বুশের বাবা) যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনার আসল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন এই অস্থির সময় বিরাজ করছিল, ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও তখন চরম উত্কণ্ঠায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পত্রে তারা উল্লেখ করেন, ভারত সরকার অবিলম্বে আমাদের দেশ ও সরকারকে স্বীকৃতি দান করুক। এ উপলক্ষ্যে আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের আন্তরিক আশা রয়েছে যে, আমাদের যৌথ প্রতিরোধের ফলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের হীন পরিকল্পনা ও জঘন্য ইচ্ছা ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং আমরা সফল হব।’

নিউইয়র্কে তখন বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। অবশেষে খবর এল, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হতে পারেনি। সমাজতান্ত্রিক দেশ পোল্যান্ডও বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের কাছে সবচেয়ে স্বস্তি হয়ে এলো ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের ভোটদানে বিরত থাকাটা।

নিরাপত্তা পরিষদে হেরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। প্রস্তাবটি সেখানে পাশও করাতে সক্ষম হয় তারা। কিন্তু সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব মানার বাধ্যবাধকতা না থাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ১১টা সেক্টরের সবগুলোতেই পালানোর পথ খুঁজছিল পাক হানাদার বাহিনী।