৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পরামর্শ দিলেন বঙ্গোপসাগরের দিকে সপ্তম নৌবহরকে যাত্রা শুরু করবার জন্য নির্দেশ দিতে। ইয়াহিয়া খান ও তাদের পশ্চািমা মিত্ররা ভেবেছিল এই সপ্তম নৌবহর আসার কথা শুনে যৌথবাহিনীর মনোবল ভেঙে যাবে। সেই সুযোগে একবারে শেষ লগ্নে চরম আঘাত হেনে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে তছনছ করে দেওয়া। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উলটো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই কথা জেনে মুক্তিযোদ্ধারা আরো বিপুল উত্সাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
সেদিন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আরেক পরীক্ষিত মিত্র, তত্কালীন পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। ফলে সপ্তম নৌবহরের যাত্রা শুরু হওয়ার পরই থেমে যায়।
এদিনে, জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তানি দলের নেতা মাহমুদ আলী দেশে ফিরে এসে আজকের দিনে দেখা করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভারতের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানো। চীন ও আমেরিকার সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান তাদের নির্ভীক ও ঐতিহাসিক সমর্থনের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’ মুক্তিযুদ্ধের এই দিনেই মুক্ত হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি। আর দাউদকান্দি মুক্ত হওয়ার ভেতর দিয়েই শুরু হয় মেঘনা তীরের অঞ্চলগুলো মুক্তির প্রক্রিয়া। দিন না পার হতেই মেঘনার পুরো পূর্বাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। একই দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ে গাইবান্ধা, গাজীপুরের শ্রীপুর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও নেত্রকোনায়।
মুক্তিযুদ্ধের এ সময় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধই ছিল। আজকের দিনের এক সরকারি ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় হামলার অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নেওয়া হয় চরম দুরভিসন্ধিমূলক এক সিদ্ধান্ত। দেশের শিক্ষকদের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত হতে হবে।