শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২১

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আদালতে গতকাল মঙ্গলবার মামলার শুনানির প্রথমদিন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন বাদী দেশ গাম্বিয়ার আইনজীবীরা। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য আদালতের কাছ থেকে অন্তর্বর্তী আদেশ লাভ করা। আদালতকে তারা বলেন, এখনো গণহত্যা হচ্ছে, মিয়ানমারকে তা বন্ধ করতে বলতে হবে। গণহত্যায় জড়িতদের যথাযথ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে এবং গণহত্যার পুনরাবৃত্তি      যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত ছাড়া রোহিঙ্গাদের আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত ১১ নভেম্বর অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া। এ মামলায় লড়তে গাম্বিয়াকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে এই মামলা লড়তে আদালতে হাজির হয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি।

গতকাল দ্য হেগের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মামলার শুনানি শুরু হয়। গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। মিয়ানমারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। শুনানির শুরুতে আইসিজের প্রেসিডেন্ট আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ শুনানির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিচারকক্ষে উপস্থিতদের অবহিত করেন। বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটার কিছু পরে আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে এডহক দুই জন বিচারপতির নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ওই দু’জন বিচারপতি গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। শুরুতেই দুই এডহক বিচারপতি গাম্বিয়ার নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস শপথ নেন। এরপর দ্য হেগের পিস প্যালেসে মামলা (গাম্বিয়া ভার্সেস মিয়ানমার) এর শুনানি শুরু হয়।

প্রথমদিন বাদী পক্ষ তাদের তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছে। আজ বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। জানা গেছে, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে সু চি যুক্তি দেখাবেন যে, এই বিষয়ে বিচার করার অধিকার আইসিজের নেই। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রথমে গাম্বিয়া যুক্তি দেবে, এরপর মিয়ানমার তা খন্ডনের সুযোগ পাবে।

গতকাল শুনানিতে সুচনা বক্তব্য রাখেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি আবুবাকার তামবাদু। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নির্বিচার হত্যার প্রশ্নে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতেই তার দেশ আইসিজেতে এই অভিযোগ এনেছে। কেন জীবদ্দশাতে এটা আমরা ঘটতে দিচ্ছি? সবাই মনে করে এখানে মিয়ানমারের বিচার হচ্ছে। আসলে এখানে বিচার চলছে আমাদের সামগ্রিক মানবিকতার। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে গণহত্যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গারাও মানুষ। তাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমি ২০১৮ সালে কক্সবাজারে ওআইসির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করি। সেখানে রোহিঙ্গাদের চোখে ভয়, কষ্ট ও মানবিকতার চরম অবমাননা দেখেছি। জানতে পেরেছি, সেখানে কীভাবে বেঁচে থাকাদের স্বজনরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, রাখাইনে ব্যাপক গণহত্যা না হলে লাখ লাখ লোক পালিয়ে বাংলাদেশে যেত না।