শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২০৩০ সালের আগেই দেশ কুষ্ঠমুক্ত হবে :প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের আগেই দেশ থেকে কুষ্ঠরোগ নির্মূল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা প্রদানে কুষ্ঠরোগীদের জন্য ওষুধ তৈরি এবং বিনা মূল্যে বিতরণ করার জন্য স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য কুষ্ঠ উদ্যোগ’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন-২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হাম-পোলিওসহ বিভিন্ন রোগ একে একে আমরা দূর করেছি। ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশকে কুষ্ঠমুক্ত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক ওষুধ কোম্পানি রয়েছে, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করে এবং তাদের ওষুধের মান খুবই ভালো। তাই আমি তাদের বিশেষায়িত ওষুধ তৈরি করার জন্য অনুরোধ জানাতে চাই, যা কুষ্ঠরোগীদের জন্য দরকার। এসব ওষুধ রোগীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করার ব্যবস্থা করুন, যা দ্রুত আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’ ২০৩০ সালের আগেই কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় কুষ্ঠ কার্যক্রম জোরদার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, মাঠপর্যায়ের কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ লক্ষ্যে আমরা যদি আন্তরিকভাবে        কাজ করি, তাহলে লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের অনেক আগেই কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুষ্ঠরোগীদের সঙ্গে আচরণ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত লোকদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করার প্রযোজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি লোকজনকে বলতে চাই, তারা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাই তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া সঠিক নয়। কোনো ব্যক্তির দেহে কুষ্ঠরোগ শনাক্ত হলে আপনাদের সহানুভূতির সঙ্গে তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে এবং তিনি যাতে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই লক্ষ্যে চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি খুবই জরুরি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক পর্যায়ে কুষ্ঠরোগীদের দেহে রোগটি শনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুষ্ঠরোগের কারণে প্রতিবন্ধী লোকদের উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চাকরি থেকে অবশ্যই বাদ দেওয়া যাবে না বরং প্রতিবন্ধী লোকের জন্য একটি অনুকূল কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি কুষ্ঠরোগীদের জন্য দ্রুত বিশেষ আবাসন প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এই নির্দেশনার ফলে প্রতিবন্ধীদের জন্য গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগ নিরাময় কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সব বেসরকারি সংস্থাকে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং কুষ্ঠরোগী তথা কমিউনিটির সেবার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ডাব্লিউএইচও গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ইওহেই সাসাকাওয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। কুষ্ঠরোগ ও এর চিকিত্সার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।