শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৩০

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা রাখতে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, ‘অনেক কষ্ট, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যাতে একটু সুখের মুখ দেখে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন আরো এগিয়ে যাবে।

গতকাল মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা ও সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে টাকা নেই—এ কথা সত্য নয়। টাকা না থাকলে আমরা এতগুলো উন্নয়নকাজ কীভাবে করছি? আমাদের ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যা দিয়ে ছয় মাসের              খাদ্য কেনা যাবে।’ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘দেশবাসীকে বলব, জঙ্গি-সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায়ী ও ধর্ষণকারীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিন।’

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক এমপি এই ভাষণ ভালোভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা জানতে পারবেন। আমি কারো প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলতে চাই না। কারো প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাই না। আগে মানুষের জীবনে কোনো নিরাপত্তা ছিল না, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। আগে বাংলাদেশকে অনেকে করুণার চোখে দেখত, কিন্তু এক দশকে বাংলাদেশের সেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পেরেছি। কারণ আমরা জাতির পিতার আদর্শে দেশকে পরিচালনা করছি। তার পথ ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এত উন্নয়নের পরও যদি কেউ না দেখে, সেটা তাদের দেখার ভুল। আমরা গ্রাম পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন করেছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।’

বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত থেকে সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা দেখা যায়, সেগুলোরও আমরা দ্রুত সমাধান করছি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। বিমানবন্দরসহ সব জায়গায় চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, তারপরই তাদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যেন কেউ করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশে আসতে না পারে, এই ভাইরাসের বিস্তার না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট।’ গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগের ভয়াল প্রাদুর্ভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আবারও মশার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, যেন ডেঙ্গু মশা জন্ম নিতে না পারে। মশার সমস্যা সমাধানে দেশবাসীকে নিজেদের বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ধর্ষণকারীদের ‘পশুরও অধম’ উল্লেখ করে সংসদনেতা বলেন, ‘যারা শিশু-কিশোরীদের ধর্ষণ করে তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। এরা পশুরও অধম। তাদেরও তো মা-বোন-মেয়ে আছে। মানুষ এমন জঘন্য চরিত্রের অধিকারী কীভাবে হতে পারে তা জেনে বিস্মিত হই।’ তিনি বলেন,  জঙ্গিবাদ-মাদক-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেশবাসীও যেন এদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা তুলে তিনি বলেন, রমজান এলেই অনেকে অনেক রকম সুযোগ খোঁজে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুত রাখা হচ্ছে। কাজেই এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।

এর আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলার। সাধারণত দেশে কোনো দুর্যোগ এলে যেন সেটা মোকাবিলা করা যায়, সে জন্য তিন মাসের খাদ্যশস্য ক্রয়ের মতো অর্থ রিজার্ভ রাখা হয়। অথচ এখন দেশে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে ছয় মাসের খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘টাকা যদি না-ই থাকত, তবে এত উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে? দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাও দেশের জন্য একটা বড়ো অর্জন।’