শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনার প্রভাব

স্বাধীনতা দিবস পালিত হলো সীমিত পরিসরে

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২০, ২২:৪৯

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার সীমিত পরিসরে মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মরণ করেছে জাতি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর এই প্রথম জাতীয় স্মৃতিসৌধ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে বঞ্চিত হলো। মানুষের ভালোবাসার স্পর্শ পেল না লাখো শহিদের স্মৃতি বিজড়িত সাভারের এই স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে এসে এই প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব অনুষ্ঠিত হলো না। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে, জনসাধারণকে বাঁচাতেই সরকার এ বছর জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন           পর্ব বাতিল করেছে। করোনার কারণে ঘরে ঘরে মানুষ আপাত বন্দি। তবুও প্রতিটি বাঙালির মনে অনুরণিত হয়েছে লাখো শহিদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। তারা অবনত মস্তকে স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের অবদান। ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের প্রতি। প্রতিটি বাঙালির হূদয়ে অনুরণিত হয়েছে লাল সবুজের পতাকা।

করোনার কারণে সরকারিভাবে সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা পর্ব ও স্বাধীনতা দিবসের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। তবে, এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থা সীমিত আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাতি। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একং বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসসহ বাংলাদেশিরা বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণ করে। এছাড়া, অনেকে ঘরে থেকে আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে পারিবারিকভাবে এবং প্রতীকীভাবে শহীদদের স্মরণে নানা আয়োজনে অংশ নেয়। এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা দিবসে আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করেছে বাংলা একাডেমি। আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে একাডেমি আঙিনায় উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ:গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির সব ইউনিটসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দোয়া মাহফিল: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।  মোনাজাতে ২৬ মার্চ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদতবরণকারী সব শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এছাড়া বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে যেন বাংলাদেশের মানুষসহ বিশ্বের মানুষ পরিত্রাণ পায় সেজন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়: গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বরিশালে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন : করোনা ভাইরাসের কারণে বরিশালে স্বল্প আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ লাইন্স মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়ার মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় বরিশাল সার্কিট হাউজে। এ সময় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. ইয়ামেন চৌধুরী, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন, বিভাগীয় রেঞ্জ (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান উপস্থিত ছিলেন।

দেশে দেশে স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন: করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ভিন্ন পরিবেশে প্রতিটি বাংলাদেশ মিশনে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এবং স্বল্পপরিসরে আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এসব অনুষ্ঠান শেষ হয়। বেশির ভাগ দেশে ১০ জনের অধিক লোকের জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকায় শুধু দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আবার কয়েকটি দেশে কারফিউ থাকায় অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও সংবাদপত্রে ‘স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র’ প্রকাশ করা হয়।