শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৬

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:০১

দেশে আরো দুই জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশে করোনা ভাইরাস মহামারির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, নতুন করে কারো মৃত্যুর তথ্য না আসায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতোই ছয় জনে রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারী (৫০) মারা গেছেন।

হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নতুন করে দুই জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন আক্রান্ত দুই জনই পুরুষ; এক জনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আরেক জনের বয়স ৭০-এর বেশি। তারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে পারিনি। ইনভেসটিগেশন করছি।’ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো পাঁচ জনকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আইসোলেশনে আছেন ৭৮ জন। সারা দেশে এখন কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৬ হাজার ৭০০ জন। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরলেও অনেকের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন—একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যে সংখ্যায় এসেছে তাদের সবাই কোয়ারেন্টাইনে থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। যারা নতুন আসছে, তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিচ্ছি। যাদের ১৪ দিন হয়ে গেছে, তাদের কোয়ারেন্টাইন মুক্ত করছি।’ 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এতদিন কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফ করে এলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল্লাহও এদিন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এন-৯৫ মাস্ক স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় না। বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক গেছে, সেগুলো সার্জিক্যাল মাস্ক। সেখানে কিছু প্যাকেটে এন-৯৫ লেখা রয়েছে। যেসব জায়গায় ভুলবশত গেছে, তা আমরা ফেরত নিয়েছি।’ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বিদেশ থেকে দেড় লাখ এন-৯৫ মাস্ক আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এগুলো আসার পর বিশেষায়িত হাসপাতালে দেওয়া হবে।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি দুই রোগী মারা গেছেন। এক জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার ও অপর জনের বুধবার। দুই জনেরই বয়স পঞ্চাশের বেশি। এদের মধ্যে মঙ্গলবার যার মৃত্যু হয় তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি ওই রোগীর নমুনা পরীক্ষার পর এ তথ্য জানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রথম জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। নেগেটিভ আসছে। অর্থাত্ তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। অপর জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যাওয়া দুই জনের কেউই করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার  দুপুরে ঢামেকের পরিচালক এ তথ্য জানান। এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যাওয়া দুই জনের নমুনায় করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। 

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটিকে মরদেহ সত্কারে প্রতি উপজেলায় ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন করে প্রশিক্ষণ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাধারণ কিছু রোগের মৃত্যুকে করোনাজনিত মৃত্যু ভেবে আতঙ্কের কারণে মরদেহ সত্কারের ভীতি এবং অনীহা প্রকাশের কারণে এ নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।  

স্থানীয় পর্যায়ে মৃতদেহ সত্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন ও তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা আল-মারকাজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ নির্দেশনা অবগতির জন্য জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে ১ মার্চ একটি জাতীয়সহ বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে সরকার। উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে ইউএনওকে প্রধান করা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারী (৫০) মারা গেছেন। ওই নারীর মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করলে রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। গত ৩১ মার্চ বন্দরের ২৩ নং ওয়ার্ডের রসূলবাগ এলাকার বাসিন্দা ওই নারী ঢাকার কুর্মিটোলা হসপিটালে চিকিত্সাধিন অবস্থায় মারা যান। এর আগে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে করোনা সন্দেহে ঢামেক কর্তৃপক্ষ তাকে কুর্মিটোলায় প্রেরণ করে। পরে সেখানে তিনি মারা গেলে আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই রিপোর্টটি পজেটিভ আসে। ওই নারীর মরদেহ তার নিজ বাড়ি রসূলবাগে নেওয়ার পর  স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে রিপোর্ট পজেটিভ হওয়ার সংবাদ পেয়ে গতকাল রাতেই বন্দর উপজেলা প্রশাসন থেকে ২৩ নং ওয়ার্ডের রসূলবাগ এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদ, ইউএনও শুল্কা সরকার, নারায়ণগঞ্জ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম এবং আইইডিসিআর এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।