শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চলতি মাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ২২:২৫

করোনা সংক্রমণ শুরুর অন্তত এক মাস পর ভয়াবহ মাত্রায় বেড়েছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনসহ বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর তথ্য এমন বার্তাই দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো সংক্রমণের পর এক মাস পার হয়নি। এজন্য চলতি এপ্রিল মাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেহেতু আমরা সফলভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছি না, তাই এপ্রিল মাস জুড়ে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। কেউ-ই নিরাপদ নই। সবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে।

দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। নতুন করে পাঁচ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ জন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য তুলে ধরেন। নতুন করে কারো মৃত্যুর তথ্য না আসায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতোই ছয় জনে রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এদিকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চেম্বারে বসছেন না অনেক চিকিত্সক; অনেক জায়গায় টেকনিশিয়ানরা কর্মস্থলে না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও বন্ধ আছে বলে প্রায়ই রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে। এমন অবস্থায় রোগীদের সেবা না দেওয়া ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারগুলো থেকে রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল কাজ কম করছে। ক্লিনিক ও চেম্বারগুলো অনেকাংশে বন্ধ আছে। আমরা সামাজিক মাধ্যমে জানতে পারছি, আমরা নিজেরাও দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এ সময়ে আপনাদের পিছপা হওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ান,           মানুষকে সেবা দিন। আমরা কিন্তু এটা লক্ষ্য করছি। পরবর্তীকালে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা কিন্তু সেসব ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হব না।

১৪ ল্যাবে চলছে পরীক্ষা

দেশে ১৪টি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯টি ও ঢাকার বাইরে পাঁচটি ল্যাব রয়েছে। তিনটি বিভাগীয় শহরে আরো তিনটি ল্যাবের প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। ঢাকায় আইইডিসিআর ছাড়াও আইপিএইচ, আইসিডিডিআর,বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, শিশু হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাস নির্ণয়ে আরটি-পিসিআর টেস্ট শুরু হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজেও কোভিড-১৯  এর পিসিআর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা ‘জরুরি’ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আশা করি সকলে পরীক্ষা করার জন্য আসবেন। পরীক্ষা করলে নিজেও নিরাপদে থাকবেন, জানতে পারবেন, আপনার অবস্থাটা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনার পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।’ করোনা ভাইরাস শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৭১ হাজার টেস্টিং কিট ও ৬৪ হাজার ১১০টি সুরক্ষা পোশাক-পিপিই মজুত রয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। বেশি বেশি করে টেস্ট করানোর জন্য তিনি চিকিত্সকদের প্রতি আহ্বান জানান। 

‘ভুয়া নিউজ’ হলে ব্যবস্থা

করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ‘ভুয়া নিউজ’ জনমনে বিভ্রান্তির পাশাপাশি কাজকেও ব্যাহত করছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ গণমাধ্যমকর্মীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে খবর প্রচার ও পরামর্শ দিতে অনুরোধও জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা বাসায় থাকার চেষ্টা করবেন, সেল্ফ ডিসটেন্স মেনে চলবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের প্রায় ২০-২২টি জেলা থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো তথ্য তারা পাননি। রোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। বড়ো বড়ো কয়েকটি হাসপাতাল শুধু করোনা ভাইরাসের জন্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কোনো রোগী, যাদের হাঁচি কাশি আসে ঐ ধরনের রোগীরা ঐ সব হাসপাতালে যাবেন, চিকিত্সা পাবেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশের ৪৩ জেলা থেকে নোভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষার তথ্য এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১৩টি নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে আইইডিসিআর ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করেছে। বাকিগুলো অন্যান্য ল্যাব এবং জেলায় করা হয়েছে।