বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দীর্ঘদিন জেলখাটা আসামিদের মুক্তির নীতিমালা করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ২২:৩৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটোখাটো অপরাধে যারা দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন এবং হত্যা, ধর্ষণ ও অ্যাসিড মামলার আসামি নয় কিন্তু ইতিমধ্যে বহুদিন জেল খেটেছেন, এমন কয়েদিদের কীভাবে মুক্তি দেওয়া যায়, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রিসভার এক জন সদস্য বলেন, যেখানে আক্রান্ত বেশি, সেখানে লকডাউন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা আসেনি। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেডে) মাস্ক ও পিপিই বানায় এমন কারখানাগুলো খোলা থাকবে, বাকিগুলো বন্ধ থাকবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

মন্ত্রিসভা আসন্ন রমজান মাসের (হিজরি-১৪৪১, ২০২০ সাল) জন্য সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিসের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রমজানে বেলা সোয়া ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে যথারীতি শুক্র ও শনিবার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠকের পরে সচিবালয়ে বৈঠক             সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিতকরণকালে একথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে। সুপ্রিম কোর্ট ও এর আওতাধীন সব কোর্টের সময়সূচি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হবে। উল্লেখ্য, সাধারণত প্রতি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সচিবালয়ে দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রিসভার বৈঠক বসলেও গতকাল গণভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে, দূরত্ব বজায় রেখে এবং যাদের এজেন্ডা ছিল সেসব মন্ত্রিদের নিয়েই সীমিত পরিসরে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারে মত্স্যপণ্য বাজারজাতে সাত বছর জেল

ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মত্স্য বা মত্স্যপণ্য বাজারজাত করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘মত্স্য ও মত্স্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে আইনের খসড়া গত বছরের ১৯ মার্চ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি মত্স্য ও মত্স্যপণ্য রপ্তানি, কারখানা স্থাপন বা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে পারবে না। কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় না রাখা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে মানের ব্যত্যয় হলে অপরাধীর বিরুদ্ধে অনধিক ৫ লাখ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা করার বিধান দেওয়া হয়েছে। কারখানা বা স্থাপনার মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও স্যানিটারি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন। মত্স্য ও মত্স্যপণ্য আমদানি ও রপ্তানি বিধানাবলি নিয়ে বলা হয়, রপ্তানির ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যমান অধ্যাদেশে বর্ণিত অপরাধের শাস্তি হিসেবে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড নির্ধারণ করা আছে। প্রস্তাবিত আইনে কারাদণ্ডের মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণ যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। কোনো ব্যক্তি রপ্তানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মত্স্য বা মত্স্যপণ্য বাজারজাত করলে শাস্তি অনধিক সাত বছর (কিন্তু ৫ বছরের নিচে নয়) কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। দূষিত মাছ বিক্রি করলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে আইনে। এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তপশিলভুক্ত করে বিচারের বিধান করা হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকারের কাছে প্রশাসনিক আপিল করতে পারবে। প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে রপ্তানি বাজার ধরে রাখা এবং নতুন বাজারে অনুপ্রবেশের সুযোগ বাড়বে এবং একই সঙ্গে মানসম্পন্ন মত্স্য ও মত্স্যপণ্য আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ রেফারেল ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস আইন, ২০২০-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

করোনা আক্রান্ত এলাকা লকডাউনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশের যেসব এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে সেসব ও পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্পূর্ণ লকডাউন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঢাকার বাইরে যেতে না পারেন এবং ঢাকায় যেন কেউ ঢুকতে না পারেন, এ নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে দেশের সব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শুধু যেসব কারখানায় পিপিই, মাস্ক ও জরুরি মেডিক্যাল সরঞ্জাম উত্পাদন হচ্ছে সেগুলো খোলা থাকবে।