শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রকল্পে গতি বাড়াতে হবে, দুর্নীতি কমাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ২০ মে ২০২০, ০৯:৫৭

আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে মূল এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরো ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এডিপির আকার দাঁড়াল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল এনইসি সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এই সময়ে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এনইসির অন্য সদস্যরা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত থেকে সভায় অংশ নেন। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে আগামী এডিপির মূল আকার বাড়ছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ।

সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনে ফিরে এসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে কৃষি, স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই দুইটি খাতের প্রকল্প প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও সেরকম নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা গতিশীল সরকার। যখনই ভালো প্রকল্প আসবে তখনই এটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ                রয়েছে ৬ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে বরাদ্দ ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জরুরি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে দুইটি প্রকল্পে। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে এই জরুরি প্রকল্প অনুমোদন দেওয় হয়েছে। তাছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়নে আরো একটি প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় গুণগতমান বজায় রেখে ভালো প্রকল্প নিয়ে আসুন, অনুমোদন দেওয়া হবে। গুণগতমানের সঙ্গে আপস করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতিকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সকলকে তিনি বলেছেন দুর্নীতি যেখানেই দেখা যাক সেখানেই অঙ্কুরে সেটি বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো প্রকল্পে গতি বাড়াতে হবে, দুর্নীতি কমাতে হবে।

আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন খাত। এ খাতে মোট বরাদ্দ ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এডিপির ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে এই খাতটি। এরপরে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা বিদ্যুত্ খাতে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত রয়েছে সাত নম্বরে। এই খাতে বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। আর ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা নিয়ে কৃষি খাত অষ্টম স্থানে আছে।

আগামী এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। বিদেশি সহায়তা হিসেবে খরচ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৫৮৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৪৫৬টি, কারিগরি সহায়তার প্রকল্প ১২৭টি, জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প ১টি। এর বাইরে এডিপিতে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব প্রকল্প রয়েছে ৮৯টি।

ভার্চুয়াল বৈঠকের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বেই এখন ভার্চুয়াল মিটিং করছে। আমাদেরও মনে হয় এভাবে চালাতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত) সংশোধিত এডিপির ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ খরচ হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, শতাংশে কম হলেও এবার টাকার অঙ্গে বেশি খরচ হয়েছে। করোনা ভাইরাস না থাকলে আরো ভালো করা সম্ভব হতো। এডিপি বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে গতানুগতিক ধারাই থাকবে। তবে প্রকল্পের গতি বাড়াতে হবে।