শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৬০ পৌরসভায় নির্বাচন আজ

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৪৩

দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে পৌরসভাগুলোতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাবো, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও পিরোজপুর—এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবকটি পৌরসভাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। অনেক পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি-জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। প্রথম ধাপে পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, সব পৌরসভায় পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স মাঠে রয়েছেন। এছাড়া প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের টিম টহল দিচ্ছে। ১ লাখের বেশি ভোটার বিশিষ্ট পৌরসভায় চার প্লাটুন বিজিবি, ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ভোটারের পৌরসভায় তিন প্লাটুন এবং ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটারের পৌরসভায় দুই প্লাটুন এবং ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১৭টি পৌরসভায় অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পৌরসভাগুলো হচ্ছে—দিনাজপুর, মোহনগঞ্জ, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, সাভার, বসুরহাট, গুরুদাসপুর, খাগড়াছড়ি, মোংলাপোর্ট, মুক্তগাছা, ফুলবাড়িয়া, ছাতক, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার। প্রতিটি পৌরসভায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ১১ জন সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বগুড়ার তিনটি পৌরসভায় এ সংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে দুই জন করে বাড়তি পুলিশ দেওয়া হয়েছে।

৬০টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৮০টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন।

আজ যে ৬০ পৌরসভায় ভোট :

গাজীপুরের শ্রীপুর (ইভিএম), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাথিয়া (ব্যালট) ও ঈশ্বরদী (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দুয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের  ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভা।

দেশের পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। এছাড়া আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৫ সালে পৌরসভায় মেয়র পদে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভার ভোট করতে হয়।