শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৬৬ পৌরসভায় ফ্ল্যাট হবে

আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:১৫

দেশের গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভায় কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ৬৬টি পৌরসভায় ৩ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ১ হাজার ১৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। চলতি বছর কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় দেশের আটটি বিভাগের ৫৯টি জেলার ৬৬টি উপজেলার ৬৬টি পৌরসভায় এই আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার                 একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের তুলে ধরেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভায় কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছ থেকে যাতে বাসা ভাড়া বাবদ টাকা নেওয়া না হয়। তবে ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা খরচের বিষয়ে আলোচনা উঠলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত কম টাকা তাদের কাছ থেকে নেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

একনেক সভায় মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে দুইটি সংশোধিত। নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ এবং সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দ মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) ৫ হাজার ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

সভায় ৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা এলসি স্টেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ৮৪৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা। করোনার কারণে এর মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের নদীর তীরগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চলে যায়। যার কারণে নদীর নাব্যতায় ক্ষতি হয়। আমরা যদি সেখানে পিলার করে ওয়াকওয়ে করে দিতে পারি, তাহলে নদীর ৩০-৪০ ফুট জায়গা বেঁচে যায়। প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ওয়াইজ ঘাট, সদর ঘাট, এসব এলাকাতে প্রশস্ত রাস্তা নেই। ঢাকার চারপাশে নদীগুলোর পাড়ে এলিভেটেড ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদী হতে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমির উন্নয়ন এবং প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ১২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৫০৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার লক্ষ্য ছিল। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। নদী শাসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতি বছর নদী ড্রেজিং করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ কাটা রোধে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, ৪১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রংপুর স্থাপন প্রকল্প, ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ , মাদারীপুরের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প, ১ হাজার ২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১৫ পুনর্বাসন প্রকল্প এবং ৪ হাজার ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে এক্সিলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং স্কিল ফর ইকোনমিক ট্রান্সফর্মেশন প্রকল্প। এ প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক হতে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া যাবে।

একনেক সভায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা ও পদ্ধতির দিকনির্দেশনা শিরোনামে একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানন্ত্রী। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।