শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টম্যাটোর উচ্চ ফলন মিলবে গ্রীষ্মকালেও

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৯

শীতকালীন সবজি হিসেবে টম্যাটোর সুখ্যাতি থাকলেও পুষ্টিগুণ ও নানাবিধ ব্যবহারের জন্য বর্তমানে সারা বছরই এর কদর রয়েছে। শীতকালে টম্যাটোর উচ্চ ফলন হলেও গ্রীষ্মকালে ফলন হয় অনেক কম এবং মূল্য থাকে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফলন কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ টম্যাটোর ঢলে পড়া রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় শতভাগ গাছ মারা যায়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষকরা দাবি করেছেন উচ্চ ফলনশীল জাত নয়, মাটির জৈব শোধনের মাধ্যমে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারা সরিষার খৈল ব্যবহার মাটির জৈব শোধন করেছেন এবং শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে এবং মূল্যও সাধারণের নাগালের মধ্যে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আর্থিক সহযোগিতায় উক্ত গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন শেকৃবি উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন। এতে সহায়তা করেছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম। গবেষকরা জানান, ‘অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও উদ্ভিদ কৃৃমির জন্য আদর্শ পরিবেশ। গ্রীষ্মকালে মাটি অতি উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। ফলে টম্যাটো গাছ খুব সহজেই ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া বা উদ্ভিদ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়।’ গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বেশির ভাগ গ্রীষ্মকালীন টম্যাটোর চাষ বেশি হয় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। কোনো গাছ যদি ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে শতভাগ মৃত্যু ঘটে। তাই গ্রীষ্মকালে টম্যাটোর ভালো দাম থাকলেও কৃষকরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে গ্রীষ্মকালে পাওয়া টম্যাটোর বেশির ভাগই হিমাগারে সংরক্ষণ করা, দামও অনেক বেশি।’ ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গাছ বৃদ্ধির যে কোনো সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো গাছই নেতিয়ে পড়ে এবং মরে যায়। গাছের কাণ্ডে ও শিকড়ে বাদামি দাগ পড়ে। গাছে প্রথমে কাণ্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যায়। রোগ বৃদ্ধি পেলে সব পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ শাখাটি মরে যায়। এভাবে পুরো গাছটাই ধীরে ধীরে মরে যায়।’

প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, ‘যদি গ্রীষ্মকালে আমরা মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমাতে পারি তাহলে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও উদ্ভিদ কৃমি অনুকূল পরিবেশ পাবে না। এজন্য টম্যাটোর চারা লাগানোর সাত দিন আগে মাটির সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে সরিষার খৈল মিশিয়ে মাটি জৈব শোধন করতে হবে। শোধনকৃত মাটিতে টম্যাটোর চারা লাগালে আর ঢলে পড়া রোগ হবে না। মাটি জৈব শোধন করতে ১০ কেজি মাটির সঙ্গে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল ব্যবহার করা হয়। সরিষার খৈল মিশ্রিত মাটিকে ৭-১০ দিন শুকাতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমরা কৃষকদের মধ্যে এই সহজ মাটি শোধন ব্যবস্থাপনাটি ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে কৃষকও লাভবান হবে। একই সঙ্গে বাজারে টম্যাটোর দাম কমে আসবে এবং গ্রীষ্মকালেও টাটকা টম্যাটো পাওয়া যাবে।’