শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জেসিন্ডা আর্ডেনের মতো নেতা দরকার যুক্তরাষ্ট্রের

আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ২২:৫৩

গত সপ্তাহে জুমার নামাজ চলাকালে নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীর হাতে সংঘটিত পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন বিশ্ববাসীর কাছে মানবতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে হাজির হয়েছেন। হামলার পর তিনি যেভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন এবং সামলাচ্ছেন তাতে নিহতদের স্বজনদের যন্ত্রণা অনেকখানি লাঘব হয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন, একটি দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী থাকা সেই দেশের জন্য গর্বের বিষয়। বাদ যায়নি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসও। সম্প্রতি এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল, ‘জেসিন্ডা আরডেনের মতো নেতা দরকার আমেরিকার’। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, নিউজিল্যান্ড একজন   জেসিন্ডা পেলে আমেরিকা কেন পাবে না।

সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে কিভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘৃণা, সহিংসতা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয় তা নিউজিল্যান্ডে এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল। তবে এই ঘটনার পর যেভাবে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন দেশটির প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে প্রকাশ্যে এলেন তাও অন্যদের জন্য অনুসরণীয়। সেদিনের হত্যাকাণ্ডের পরপরই জেসিন্ডা তার দেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি শিগগিরই সামরিক ধাঁচের অস্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবেন। এই ধরনের অস্ত্রের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অনেক লোক হতাহত হয়েছে। সর্বশেষ শিকার নিউজিল্যান্ডের মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরা। জেসিন্ডা তার কথা রেখেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি সামরিক ধাঁচের স্বয়ংক্রিয় এবং আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন। অর্থাত্ এখন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সামরিক বাহিনী ছাড়া কারো হাতে এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দেখলেই তাকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হবে।

গত সপ্তাহে জেসিন্ডা পার্লামেন্টে আহ্বান জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে যেন ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা না চালানো হয়। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন। জেসিন্ডা বলেছেন, এ ধরনের সামাজিক প্ল্যাটফরম কেবল লাভের আশায় চালু রাখা অযৌক্তিক। কেউ খারাপ কাজে তা ব্যবহার করলে তার দায় এরাও এড়াতে পারে না। তবে খুনি যে মতবাদ প্রচার করার জন্য এত কষ্ট করল তাতে লাভ তো হয়নি, উল্টো তার সমমনারা তীব্র ঘৃণারপাত্র হিসেবে আঁস্তাকুড়ে স্থান করে নিয়েছে।

জেসিন্ডার এসব বক্তব্য একজন পরিপক্ব ও রাষ্ট্রের যোগ্য নেতারই পরিচয় বহন করে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। পরে নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড’ নিউইয়র্ক টাইমসের এই সম্পাদকীয় প্রকাশের বিষয়টি তাদের রিপোর্টে তুলে ধরে। মার্কিন পত্রিকাটি কিভাবে জেসিন্ডার মতো একজন নেতা পাওয়ার জন্য তীব্র আকুতি জানিয়েছে সেটাও পত্রিকাটি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করে।