শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভারতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৩৭

যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ’র বিরুদ্ধে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক নারী কর্মকর্তা এই অভিযোগ করে ২২ জন বিচারপতি বরাবর হলফনামা দিয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী হলফনামায় গত বছরের অক্টোবরের দুটি অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন। এর কিছু দিন আগেই প্রধান বিচারপতি হন গগৈ। তবে প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিচার ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নষ্ট করতেই এই অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর:এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও বিবিসি’র।

ভারতের আইন অনুযায়ী অভিযোগকারী নারীর পরিচয় প্রকাশ করা যায় না। হলফনামায় ঐ বিবাহিত নারী বলেছেন, ‘গত বছরের ১০ ও ১১ অক্টোবর বিচারপতি গগৈ’র বাড়ির অফিসকক্ষে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। প্রধান বিচারপতি আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন, আমার গায়ে হাত বুলান এবং তার শরীর দিয়ে আমাকে চেপে ধরেন। তখন দুই হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।’ ওই নারীর দাবি এরপর তাকে তিনবার বদলি এবং গত ডিসেম্বরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই নারীর স্বামী এবং ভাইকেও চাকরিতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চরম হুমকিতে:দাবি প্রধান বিচারপতির

যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান বিচারপতি গগৈ। তার পক্ষ থেকে প্রথম জবাব আসে সুপ্রিম কোর্টের মহাসচিবের মাধ্যমে। এতে বলা হয়, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুিসত। একইসঙ্গে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সাথে ওই নারীর যোগাযোগের কোনো সুযোগ ছিল না।

এরপর গতকাল শনিবার বিচারপতি গগৈ নিজেই সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চের সামনে বলেন, এসব অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য আমি এতটা নীচে নামতে চাই না। এই অভিযোগ অবিশ্বাস্য। এর পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এর পিছনে কোনো একটা শক্তি কাজ করছে, যারা প্রধান বিচারপতির অফিসকেই নিষ্ক্রিয় করতে চাইছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, সেই কারণেই এই রাস্তা বেছে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে চাকরি করার পর আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আমার পিওনের কাছেও এর থেকে বেশি টাকা আছে। ২০ বছর ধরে চাকরি করার পর এটা কি প্রাপ্য ছিল আমার? তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার শুনানি হবে। আমি পদে থেকে ভয়-ভীতিহীনভাবে এসব কাজ শেষ করতে চাই। বিচার ব্যবস্থাকে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখন চরম হুমকিতে রয়েছে।

একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, যে নারী এই অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের মামলা রয়েছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শুনানির সময় বলেন, এই অভিযোগ প্রধান বিচারপতিকে ব্ল্যাকমেল করার কোনো কৌশল হতে পারে।

প্রধান বিচারপতি জানান, এই মামলায় তিনি কোনো আদেশ দেবেন না, জ্যেষ্ঠ বিচারপতি অরুণ মিশ্রই আদেশ দেবেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ পুরো বিষয়টিতে সংবাদমাধ্যমকে সংযত এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেছেন। বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, এই ধরনের অভিযোগ এলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে ধাক্কা লাগবে। এই মামলার রায় পরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।