সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী। গতকাল বুধবার বাদ আছর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার খেলার মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের পাশে দাফন করা হয়েছে। আগামী শনিবার এই মাঠেই তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা প্রাণ কেড়ে নেয় জায়ানেরও। বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সকে হাসপাতালে রেখে লাশ হয়ে গতকাল বেলা ১২টা ৪২ মিনিটে দেশে ফিরে আসে আট বছরের জায়ান। জায়ান চৌধুরীর বাবা মশিউল হক চৌধুরী এখনো জানেন না, তার সন্তান আর নেই।
আদরের নাতির লাশ আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বিমানবন্দরের টারমার্কে নাতি জায়ানের নিথর মরদেহ গ্রহণ করেন তিনি। সেখান থেকে মরদেহ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ বারের মতো জায়ানকে দেখতে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানীর ৯ নম্বর সড়কের শেখ সেলিমের বাসায় যান। প্রধানমন্ত্রী বাসায় আসার পর এক হূদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেখ সেলিমসহ সব আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী জায়ানের মরদেহ দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। শিশু জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও ছিল অনেক প্রিয়। শেখ হাসিনা এই বাসায় এক ঘন্টারও বেশি সময় অতিবাহিত করে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। জায়ান চৌধুরীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই। শেখ সেলিমের বাড়িতে জায়ানের আত্মার শান্তি কামনায় সকাল থেকে করা হয়েছে কোরআন তেলাওয়াত। বাসায় যান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাপা) ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফসহ আওয়ামী লীগ এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও জায়ানকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে ভিড় করেন।
জায়ান চৌধুরী ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করত। তার নানার বাসার পাশে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ। নানা বাড়ি এলে সে এই মাঠে খেলত। আজও সে এই মাঠে এসেছিল, তবে অন্যের কাঁধে। নিরব-নিথর হয়ে। গতকাল হাজারো মানু?ষের অংশগ্রহ?ণে বনানী ক্লাব মাঠে জায়ানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় জায়ানের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। জানাজার আগে পরিবারের পক্ষে কথা বলেন শেখ সেলিম। জায়ানের জন্য দেশবাসী যে সহমর্মিতা দেখিয়েছে, তার জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে আহত জামাতা, জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরীর সুস্থতা কামনা করে সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।’ জায়ানের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া প্রমুখ।
শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী মশিউল হক প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন বেড়াতে। ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় স্মরণকালের ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সও গুরুতর আহত হয়েছেন। কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের পর প্রিন্সকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা।