শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের পক্ষে রাশিয়া, পাকিস্তানের পাশে চীন

আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৯, ২১:৫৫

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বশক্তিগুলো। ইতিমধ্যে সরাসরি ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয়ার বিষয়টিকে ভারতের ‘বৈধ পদক্ষেপ’ এবং সাংবিধানিক অধিকার বলছে দেশটি। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রাজ্যটিকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত ভারতীয় গণতন্ত্রের সংবিধানিক কাঠামো মেনেই করা হয়েছে।

রাশিয়া আরো বলেছে, মস্কো প্রত্যাশা করছে যে কাশ্মীর সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ওই অঞ্চলে কোনও পক্ষই অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। আমরা আশা করব, শিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণাপত্র মেনে দুই দেশ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে তাদের যাবতীয় দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে।

অন্যদিকে, এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। চীন-ভারত সম্পর্কের এই ফাঁটল বহু পুরনো। ডোকলাম ইস্যুতে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কল্যাণে সেই উত্তেজনা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এশিয়াতে চীনের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হিসেবে দশকের পর দশক পরিচিতি পেয়ে আসছে পাকিস্তান। দেশটির সঙ্গে সীমান্তও রয়েছে চীনের। বিশ্লেষকরা বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে যদি পাক-ভারত সংঘাতের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সেক্ষেত্রে চীনারাও বসে থাকবে না। কারণ কাশ্মীরের আকসাই অঞ্চলটি রয়েছে চীনের দখলে। নিজেদের অধিকৃত অঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো উপায়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে চীন সরকার। একারণে চীন এই ইস্যুতে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা অন্যায় কিছু নয়। তাছাড়া ইসলামাবাদ বিষয়টিকে জাতিসংঘের নিরাপত্ত পরিষদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামাবাদের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছে বেইজিং। অর্থাত্, চীনের নীতিগত সমর্থন পাকিস্তানের পক্ষে আছে।

‘শেষ রক্তবিন্দুপর্যন্ত লড়বেন ইমরান’

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার পদক্ষেপ নেয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ওরা (ভারত) পারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও কিছু করার ষড়যন্ত্র করতে পারে। যদি তেমন কিছু করে তবে আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব। ইমরান খানের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি পার্লামেন্টে সরাসরি ঘোষণা দিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর বলতে তিনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরকেও বোঝেন। তিনি বলেন,আমি এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিতে চাই যে যখনই আমরা জম্মু ও কাশ্মীর বলি, তার মধ্যে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরও পড়ে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। গোটা জম্মু ও কাশ্মীরই আমাদের অখন্ড অংশ।

তবে ইমরান খান জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধ চান না। তিনি বলেছেন, দুই দেশের পারমাণবিক শক্তি রয়েছে। তাই যুদ্ধ হলে কি পরিস্থিতি হতে পারে সেটা সবাই বুঝতে পারে। তিনি বলেছেন, আমরা আশা করব ভারত এমন কিছু করবে না যার জন্য তাদের চরম মাসুল দিতে হয়।

সামরিক শক্তির তুলনা

বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি সংক্রান্ত ইউরোপ-ভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী সংবাদমাধ্যম আমর্ডফোর্সেসডটইইউ জানায়, ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। পক্ষান্তরে, পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ বিলিয়ন ডলার।

পরমাণু বোমা:সংবাদমাধ্যমটির হিসাবে ভারতের হাতে রয়েছে ১১০ থেকে ১২০টি পরমাণু বোমা। আর পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০টি।

সৈন্য সংখ্যা: ভারতের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা। অপরদিকে, পাকিস্তানে সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সৈন্য। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে ৪ কোটি সেনা।

স্থলবাহিনী: ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে ৪ হাজার ৪২৬টি ট্যাঙ্ক। সামরিকযান রয়েছে ৫ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি। আর পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে ২ হাজার ৭৩৫টি ট্যাঙ্ক। সামরিক যান রয়েছে ৩ হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।

বিমান বাহিনী: ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ২ হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। তবে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১ হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।

নৌবাহিনী:আমর্ডফোর্সেসের হিসাবে ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ ২টি। পক্ষান্তরে, পাকিস্তানের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।