বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডেঙ্গু আক্রান্তদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার বাসিন্দা

আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৯, ২১:৫৬

রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরান ঢাকা এলাকার। পুরান ঢাকার হাজারীবাগ, আজিমপুর, নাজিমউদ্দিন রোড, আগামাছি লেন, নিমতলী, বংশাল, সূত্রাপুর, জুরাইন, ধোলাইয়ের পাড়, মানিকনগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিত্সা নিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর ৫৫ থেকে ৬০ ভাগই ঢাকা মেডিক্যালে চিকিত্সা নেয়।

এদিকে, রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়েছে। গত তিনদিন ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট যথাক্রমে ২৪২৮, ২৩২৬ ও ২০০২ জন আক্রান্তের সংখ্যা থাকলেও শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মারা গেছেন আরো একজন ডেঙ্গু রোগী। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে এডিস মশার বংশবিস্তার কম হয়। এডিস মশার লার্ভা ধুয়েমুছে যায়। এ কারণে তিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। গতকাল যেহেতু ভারী বৃষ্টি হয়নি তাই আবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ঈদ সামনে রেখে ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকা ছাড়লে এ রোগের প্রকোপ বাড়বে বলে অনেকে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এডিস মশা না কামড়ালে যেহেতু ডেঙ্গু জ্বর হয় না, তাই মানুষ গ্রামে গেলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সম্ভবনা নেই। এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৬৫ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১১১১ জন ভর্তি হয়েছেন। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন। হাসপাতালে চিকিত্সা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৯ হাজার ৩৯৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯ হাজার ৪২০ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৫৩ জন, মিটফোর্ডে ৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭৮ জন, বিএসএমএমইউতে ৩০ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৪ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১১৩ জন, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৪ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৭৭ জন, চট্টগ্রামে ২২৬ জন, খুলনায় ১২৬ জন, রংপুরে ৭১ জন, রাজশাহী ১১৪ জন, বরিশালে ১৭৮ জন, সিলেটে ৩২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশু সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি ফেরার পথে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল সকালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় রুশা আক্তার নামের ১০ বছরের ওই শিশুর মৃত্যু হয়। রুশা মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় থাকত। কিছুদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিত্সার পর সুস্থও হয়ে ওঠে সে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠী যাচ্ছিল পরিবারের সঙ্গে। পথেই সে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালে তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা শুরু থেকেই সংকটাপন্ন ছিল। শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

আমাদের সব উদ্যোগ কাজে লেগেছে: মেয়র খোকন

আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল সকালে নগর ভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, নতুন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের সমস্ত উদ্যোগ কাজে লেগেছে। আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে।

ঈদের ছুটিতেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত সকল হাসপাতাল:স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঈদের ছুটিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা সচল থাকবে এবং কোনো ডাক্তার বা নার্স ছুটি কাটাবেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট থেকে সব কিছু পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সকলে নিজ উপজেলায় ডেঙ্গুর সঠিক চিকিত্সা পাবেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমরাও অফিস করব। যে কোনো সমস্যা হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।