বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ক্ষমা চাইলেন রাব্বানী, সিনেট থেকে পদত্যাগ শোভনের

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এদিকে অতীতের ভুলত্রুটির জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চাঁদাবাজির অভিযোগে পদত্যাগ করা রাব্বানী গতকাল তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দলীয় প্রধানের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য থেকে পদত্যাগের জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে চলব, তার হাতকে শক্তিশালী করব। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করব। সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক      লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের যে কোনো অভিযোগ কিংবা দাবি থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের কাছে আসতে কোনো লবিং কিংবা মধ্যস্থতা লাগবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্ব কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হলে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী পদত্যাগ করেন। ছাত্রলীগ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে ফেসবুকে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে লেখা স্ট্যাটাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী লিখেছেন, ‘মমতাময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির পুরো মেলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী। প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনয়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। আপনার দিগন্তবিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই।’ ফেসবুক স্ট্যাটাসে রাব্বানী আরো লিখেছেন, “মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শপরিপন্থি ‘গর্হিত কোনো অপরাধ’ করিনি। আনীত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।” রাব্বানী স্ট্যাটাস দেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে ৩ হাজারের বেশি মন্তব্য এসেছে। রাব্বানীর ভাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত গোলাম রুহানী লিখেছেন, ‘ভুল শুধরে তোমরা ফিরে আসবে স্বমহিমায় ইনশাআল্লাহ।’

অন্যদিকে রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তার ডাকসুর জিএস পদে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর মনে করেন, যে কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ খুইয়েছেন রাব্বানী, সেই কারণে ছাত্র সংসদের জিএস পদে থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, রাব্বানী যেহেতু ছাত্রলীগের মনোনয়নেই ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়েছেন এবং সেই ছাত্রলীগ থেকেই বিভিন্ন ‘অপকর্মের’ কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই তিনি ডাকসুর জিএস থাকারও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর চিঠি দিয়ে সিনেট সদস্য থেকে অব্যাহতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। গতকাল সোমবার বিকেলে শোভনের পক্ষে উপাচার্যের নিকট পদত্যাগপত্রটি জমা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব ও ডাকসু সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শোভনের অব্যাহতিপত্র পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট সভায় বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’