বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:১৩

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর তার অনুসারীরা হামলা করেছে। এতে প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে-প্রতিবাদে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে, জয় বাংলা চত্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে গতকাল শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী হল ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, পরিস্থিতি যা-ই দাঁড়াক তারা হলে অবস্থান করবেনই। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অস্থিরতার ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলন যাতে আর বাড়তে না পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় । চলমান আন্দোলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ নির্দেশ দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। আজ রবিবার এ কমিটি গঠন করা হতে পারে।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা ছিল না। তারপরেও আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য সকালে গোপালগঞ্জ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্য সমর্থক বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নবীনবাগ, সোনাকুড়, বালুরমাঠ ও গোবরা এলাকায় মারধর করে। শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে না পারে সেজন্য সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয়। সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির গতকাল পদত্যাগ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর নৈতিকভাবে আমি আর এ পদে থাকতে পারি না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছে ছাত্রলীগ গোপালগঞ্জ জেলা শাখা। গতকাল বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা সাধারণ ছাত্রদের সব যৌক্তির দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। যদিও আন্দোলনকারী ছাত্ররা জানিয়েছে, তাদের ওপর হামলায় জড়িত ছিল ছাত্রলীগের একটি অংশ।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ঐ নোটিশ গতকাল সকাল ৯টার দিকে টানানো হয়। এতে বলা হয়েছে,  বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত রাখাসহ সম্ভাব্য সব অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পূজার নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শুক্রবার রাত থেকে হলে খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুত্ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উত্কণ্ঠা, উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্যেও আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন করবেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজ, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যকারী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক টর্চার সেলে পরিণত করেছে। বিএনপি-জামায়াতপন্থি এ উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ধাওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই।

আহত যাদের নাম জানা গেছে : সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের আঁখি, কৃষি বিভাগের ২য় বর্ষের মাসুকুর রহমান, ৩য় বর্ষের শীমান্ত, অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের নাফিস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের  ফাহাদ, রসায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের মো. রাকিব হোসেন, আশিকুর রহমান, ফিসারিজ বিভাগের ২য় বর্ষের সৈকত, লোক প্রশাসন বিভাগের ২য় বর্ষের রুদ্র, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের মাসুদ, শাহরিয়ার মিজান, আল-আমিন প্রমুখ। বিভিন্ন  হাসপাতালে চিকিত্সারত অনেকের নাম জানা যায়নি।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও দ্যা ডেইলি সানের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যায়ভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়াটার প্রাঙ্গণে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ১১৫ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষি বিভাগের প্রভাষক মো. গোলাম ফেরদৌস।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ১৪টি দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের সরাসরি ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রাখা অনভিপ্রেত বলে সাধারণ শিক্ষকগণ মনে করেন। সাধারণ শিক্ষকগণ আরও বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও শিক্ষা জীবন সুন্দর করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।