শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাত্রলীগের ১০ নেতা রিমান্ডে, আরো তিন জন গ্রেফতার

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৩৪

বুয়েটের ছাত্র আববার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দোতলায় ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয় ছাত্রলীগের নেতারা। এ সময় ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার শিক্ষার্থী আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘাঁটতে শুরু করেন। তারপর কোনো বাদ বিচার ছাড়াই ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর শুরু করেন। তাই দেখে সেখানে অবস্থাকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন গালিগালাজ করতে করতে ক্রিকেটের অন্য আরেকটি স্ট্যাম্প দিয়ে মারতে থাকেন আবরারকে। ঘটনার দিন রাতে অনিক ও মেহেদীসহ অন্যরা একটু বেসামাল ছিলেন। অনিক সরকার কিল ঘুষি মারতে মারতে মেহেদী হাসান রবিনের হাত থেকে হকি স্টিক নিয়ে মারতে থাকে। তখন  ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের হাত ধরে থাকে। উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল পায়ে মারতে থাকে। সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্নাও একইভাবে নির্দয়ভাবে আবরারকে মারতে শুরু করে। এভাবে কেউ হকিস্টিক দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে আবার কেউ কিল, ঘুষি অর্থাত্ যে যার মত মারতে থাকলে অসহায় আবরার কাঁদতেও পারেননি। কারণ তখন তার মুখ চেপে ধরেছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কক্ষে ঢোকেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তারাও বসে না থেকে নিস্তেজ হয়ে পড়া আবরারকে মারধর করে। আর এভাবেই এক সময় আবরার মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় গ্রেফতার ১৩ জনের অনেকেই পুলিশের কাছে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার বর্ণনা করেছে।

ডিবি সূত্র জানায়, আবরারকে মারধরের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া ১০ জনকে গত সোমবার রাতে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাদেরকে ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এছাড়া এ হত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর ঝিগাতলা এলাকা থেকে শামসুল আরেফিন রাফেদ (২১) নামে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৭ম ব্যাচের ছাত্র। সন্ধ্যায় এজাহারনামীয় আসামি মনিরুজ্জামান ও এজাহারের বাইরে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিএমপি’র ভারপ্রাপ্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ভিডিও ফুটেজ থেকে ১৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ। 

মামলার তদন্ত ডিবিতে

হত্যার ঘটনায় চকবাজার থানায় রুজুকৃত মামলার তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত সোমবার সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হত্যার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, রক্তাক্ত জামা-কাপড় এবং সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, শেরে বাংলা হলের দোতালার বারান্দার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রায় আধাঘন্টার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে। পরে আরেকটি সিসি ক্যামেরায় রবিবার রাত ৮ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ওই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ নিয়ে হল প্রভোস্টের কক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বাক-বিতন্ডা হয়। শিক্ষার্থীরা ওই ৬ ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ তাদের কাছে দেওয়ার দাবি জানায়।