শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাত্রাতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে :বিশ্বব্যাংক

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩০

বাংলাদেশে ব্যবসায় লজিস্টিক বা সরবরাহ খাতে উচ্চ ব্যয়ের ফলে পণ্যের দাম বেশি দিতে হচ্ছে, ব্যবসার মুনাফা কমছে। বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। উচ্চ লজিস্টিক খরচের কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে, ব্যবসার খরচ বেশি হচ্ছে। ‘মুভিং ফরোয়ার্ড :কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু সাসটেইন বাংলাদেশিজ সাকসেস’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাতিয়াস হেরেরা দাপে। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়ং টিমবন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সড়কে যানজট, বন্দরগুলোতে কাজে ধীরগতি, সরবরাহের খাতে উচ্চ ব্যয়, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, লজিস্টিক সেবা খাতে শৃঙ্খলার অভাব, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে উত্পাদনব্যবস্থা এবং পণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বাধার কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে শক্তিশালী বৃদ্ধির পথকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাতিয়াস হেরেরা তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ স্বল্প মজুরির যে সুবিধা পেয়েছে, সেটিতে চাপ বাড়ছে। মোট রপ্তানি পণ্যের ৮৪ ভাগ তৈরি পোশাকনির্ভর। এই খাতে প্রতিবছর শ্রমিকের সংখ্যা কমছে দেড় শতাংশ হারে। ফলে উচ্চ মজুরির জন্য চাপ বাড়ছে। ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনতে লজিস্টিক খরচ কমাতে হবে। কারণ এই খাতে বাংলাদেশের যে ব্যয় হচ্ছে, তা অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বেশি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি পণ্যের যে দাম, তার গড়ে সাড়ে ৪ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ ভাগ চলে যাচ্ছে পরিবহন খরচে। যানজটের কারণে একটি ট্রাক গড়ে ঘণ্টায় যেতে পারে মাত্র ১৯ কিলোমিটার। ফলে পণ্যের খরচ বেড়ে যায়। যানজট কমিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে পরিবহন খরচ ৭ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ ট্রাককে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় খালি ফেরত আসতে হচ্ছে। বন্দর, উদ্যোক্তা ও পরবিহনব্যবস্থার সমন্বয় না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি যানজট না থাকত, সেক্ষেত্রে ট্রাকে পণ্য পরিবহন খরচ ৫০ থেকে ৭৩ ভাগ পর্যন্ত কমে যেত। কার্বন নিঃসারণ কমত, যার আর্থিক লাভ বছরে ১৬০ কোটি ডলার বা জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। পণ্য পরিবহন সহজ করতে রেলপথ ও নৌপথের অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পণ্য পরিবহনে টেকসই ব্যবস্থা হচ্ছে রেলযোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল পরিবহনের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, সরকার দ্রুত যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে নানামুখী চেষ্টা করছে। সড়কের পাশাপাশি নৌ ও রেলপথের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের আসামে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, শুধু পর্যটনশিল্প নয়, সব ধরনের যোগাযোগ, বিশেষ করে রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ভারত সরকার চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ঐ প্রস্তাব এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে মার্সি টিমবন বলেন, আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই প্রতিযোগিতায় যে দেশ যত বেশি কম দামে পণ্য দিতে পারছে, সে দেশ রপ্তানি বাজারে ততই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহনে ‘লজিস্টিক’ সহায়তা বাড়িয়ে, বিশেষ করে যানজট কমানোর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের প্রায় ৭ শতাংশ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বর্তমান অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ আছে। আমদানিকারকেরা কম দামে পণ্য চায়। যে দেশ কম দামে পণ্য দিতে পারে, তারা সেই দেশ থেকেই পণ্য কেনে। রপ্তানি বাড়িয়ে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কম খরচের পণ্য পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করা।