বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বেকায়দায় ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২২

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নিয়ে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিতরণ করছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। আর এতে ব্যাংক কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহকদের অর্থ সময়মত ফেরত দিতে পারছে না। বিশেষ করে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অবসায়নের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।

জুন পর্যন্ত দেশে ৩৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অবশ্য প্রতিবেদন তৈরির সময়কালের মধ্যে পিপলস লিজিংও ছিল। জুন ভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ আমানতের চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি ঋণ বিতরণ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যত আমানত রয়েছে তার ৯৬ এফডিআরের (ফিক্সড ডিপোজিড রিসিপ্ট) অর্থ। আর ৩৯ শতাংশ অর্থ এক বছরের বেশি কিন্তু দুই বছরের কম সময়ের জন্য এফডিআর নেওয়া। তিন বছরের চেয়ে বেশি সময়ের জন্য নেওয়া আমানতের ৮ শতাংশের মতো। অন্যদিকে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার প্রায় সবই দীর্ঘ মেয়াদের। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে শিল্প খাতে। এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মোট ঋণের প্রায় ৩৫ শতাংশ। বাণিজ্যিক ঋণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ শতাংশ। আর আবাসন খাত ও ভোক্তা খাতে সাড়ে ১৪ শতাংশ করে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ এখন বেশির ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। একদিকে গ্রাহক টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ। গত জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা। যা আগের তিন মাসের চেয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়া, ঋণ আদায় কম হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নগদ টাকার চরম সংকটে ভুগছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেশের ৩৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে লাল তালিকায় বা বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮টিকে হলুদ তালিকাভুক্ত এবং সবুজ বা ভালো তালিকায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কর্মকাণ্ড রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকা বিভাগকে ঘিরেই তাদের আমানত ও ঋণ ঘুরপাক খায়। এরপরে রয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অবস্থান। এর বাইরে অন্যান্য বিভাগে খুব সীমিত পরিমাণ কার্যক্রম রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাত্ প্রায় ৯৪ ভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঢাকা বিভাগ থেকে। সবচেয়ে কম আমানত সংগ্রহ হয়েছে রংপুর বিভাগ থেকে। আর ঢাকা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। যা মোট ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঋণ বিতরণ হয়েছে বরিশাল বিভাগে।