শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড

অবাধে লেনদেন করবেন গ্রাহক অপরাধে সতর্ক থাকবে ব্যাংক

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২৯

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও লটারির টিকিট কিনে ডলার পাচারের অভিযোগে এ লেনদেনে শর্তারোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত ছিল নির্ধারিত ফরম পূরণ করে অনলাইনে সফটকপি বা ব্যাংকে হার্ডকপি পাঠিয়ে অনুমোদন নেওয়া। কিন্তু আইটিফার্মসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে আপত্তি তোলে। গতকাল রবিবার নতুন সার্কুলার জারি করে অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অবৈধ লেনদেন ঠেকাতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া এ বিষয়টি সমাধানের জন্য ডাকা বৈঠকটিও নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহক এককভাবে কোনো পণ্য বা সেবামূল্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার নামে এ সুযোগের অপব্যবহার করছেন অনেকেই।

গত ১৪ নভেম্বর অনলাইনে ক্রিপ্টো কারেন্সি কেনা, জুয়া ও লটারিতে অংশ নেওয়াসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের ‘অপব্যবহার’ রোধে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঐ সার্কুলারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে বিদেশি পণ্য বা সেবা কিনতে হলে গ্রাহককে অনলাইন ট্রানজেকশন অথরাইজেশন ফরম (ওটিএএফ) পূরণ করে মোবাইল অ্যাপ বা ইন্টারনেট প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে বা হার্ডকপি ব্যাংকে জমা দিতে হতো। ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে অসঙ্গতি না পেলে ক্রেডিট কার্ডকে শুধু সেই লেনদেনের জন্য সক্রিয় করে দেবে। অনুমোদন ছাড়া অনলাইনে ডলারের কেনাকাটায় কার্ড কাজ করবে না। এর ফলে, অনলাইনে বিদেশি পণ্য বা সেবা কিনতে ডলার পরিশোধের ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হচ্ছিল। এ নিয়ম ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে দাবি আইটি ফার্মগুলোর।

তাদের অভিযোগ ও দাবি পর্যালোচনার জন্য ২৫ নভেম্বর সোমবার বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঐ বৈঠকে কয়েকটি ব্যাংকের কার্ডডিভিশন ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে গতকাল সকাল ১১টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ন কবীর, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, সহসভাপতি শোয়েব আহমেদ মাসুদ, মুশফিকুর রহমান, ১১টি ব্যাংকের কার্ডডিভিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে নতুন সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য ও সেবার মূল্য বিদেশে পাঠানো যাবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও লটারির টিকিট কেনার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লেনদেন ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য গ্রাহকের গ্রাহককে জানো (কেওয়াইসি), মানিলন্ডারিং গাইডলাইন্স পরিপালন এবং কর ও শুল্ক পরিশোধ নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এ সার্কুলারের ফলে গ্রাহককে কোনো অনুমোদন নিতে হবে না।

বেসিস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, গ্রাহকদের ভোগান্তিতে না ফেলে কীভাবে অনলাইনে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধ করা যায় সেই বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক গ্রাহককে আর অনুমোদন নিতে হবে না। যে পাঁচটি গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় ঐ গেটওয়েগুলোতে অনলাইন ক্যাসিনো, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ওয়েবসাইটের কোড ব্লক করা থাকবে।