ব্যাংক কর্মীদের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা চাকরির ক্ষেত্রে পেশাগত চাপের অন্যতম প্রধান কারণ। এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে—আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ এবং অর্থ আদায়। ব্যাংক কর্মীদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা দিতে হবে। শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে ব্যবসা টেকসই করতে যৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা দিতে হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘অকুপেশনাল স্ট্রেস অ্যান্ড জব পারফরমেন্স অব ইমপ্লয়িজ ইন ব্যাংকস :বাংলাদেশ পারসপেকটিভ’ শীর্ষক সেমিনারে ব্যাংকগুলোর প্রতি এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পাঁচ সদস্যের গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন—বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী; আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম; ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মোশাররেফ হোসেন; এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোরশেদ আনোয়ার।
সেমিনারে এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কর্মীদের চাকরিক্ষেত্রে চাপ কমানোর বিষয়ে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এরই মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছয় মাসের ছুটি নিশ্চিতকরণ, ডে-কেয়ার সুবিধা প্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এটি চাকরিক্ষেত্রে চাপ কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কিছু কর্মীর ওপর শীর্ষ ব্যবস্থাপনার নির্ভরশীলতা অনেক সময় চাপ সৃষ্টি হয়। এটিকে পরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থাপনা করে কমিয়ে আনতে হবে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা তার বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতে কর্মীদের ওপর চাপ কমাতে সঠিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোরারোপ করেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক কর্মীদের ওপর অযৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া যাবে না। দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রমোশন এবং প্রণোদনার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকলে মানবিক ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা সম্ভব।
বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংককর্মীদের সন্তুষ্ট রাখতে পারলে পারফরমেন্স ভালো হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ব্যাংকিং খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং ঠিকে থাকার লড়াই থেকে ব্যাংককর্মীদের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কারো ওপর অযৌক্তিক চাপ দেওয়া যাবে না। এতে খুব বেশি লাভ হয় না।
রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভালো পরিকল্পনা থাকলে চাপ কমানো সম্ভব। সবাইকে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। এটি কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এ ধরনের কাজে আলাদা টিম রাখতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, ব্যাংকিং খাতে সঠিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হলে কর্মীদের ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি হবে না।