রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন না হওয়ায় ঝুঁকির মুখেই লেনদেন হচ্ছে। যে কোনো সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি ঝুলে আছে। সুরাহার বদলে অজ্ঞাত করণে একধরনের সময়ক্ষেপণ করার অভিযোগও তুলেছে সূত্রগুলো। সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে গড়িমসির কারণে কারিগরি ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে অগ্রণী ব্যাংক। কারণ, একটি ব্যাংকের জন্য কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমেই ব্যাংকিংয়ের মূল কাজগুলো করা হয়। রিয়েল টাইম ব্যাংকিংয়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। কিন্তু এটি আপগ্রেড না হওয়ায় গ্রাহকরাও প্রত্যাশিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্রমতে, এর আগে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করাসহ সফটওয়্যার আপডেট না করায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি টেমিনসের স্থানীয় প্রতিনিধি ফ্লোরা টেলিকমকে কারণ দর্শাও নোটিশ এবং পরবর্তীকালে ফ্লোরার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে অগ্রণী ব্যাংক। একই ঘটনায় টেমিনসও ফ্লোরার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে। অগ্রণী ব্যাংক ও টেমিনস কর্তৃক চুক্তি বাতিল করায় ফ্লোরা টেলিকম গত ৮ জুলাই উচ্চ আদালতে আর্বিট্রেশন দরখাস্ত দায়ের করে। ১৮ জুলাই শুনানিকালে উচ্চ আদালত সাত দিনের মধ্যে টেমিনসের বকেয়া অর্থ সাড়ে ৭ লাখ ডলার পরিশোধ করতে ফ্লোরাকে নির্দেশ প্রদান করেন। ফ্লোরা অর্থ পরিশোধ না করে সময় চেয়ে আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। পরবর্তী শুনানিকালে ঐ অর্থ প্রদানের বৈধ কাগজপত্র কোর্টের নিকট প্রদান করতে ফ্লোরাকে নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। ফ্লোরা তা জমা দিতে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গত ২২ জুলাই ফ্লোরা উচ্চ আদালতকে ঐ অর্থ জমা প্রদানের বিষয়ে অবহিত করে। আদালত আগামী ১৪ অক্টোবরের মধ্যে আর্বিট্রেশন পিটিশন করার জন্য ফ্লোরা টেলিকমকে নির্দেশ প্রদান করেন। অগ্রণী ব্যাংক সূত্রমতে, আর্বিট্রেশন পিটিশন করতে হবে সিঙ্গাপুরের কোর্টে। যেহেতু সিঙ্গাপুরে টেমিনসের সঙ্গে ফ্লোরার চুক্তি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রণী ব্যাংক, টেমিনস ও অন্য কোনো পক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধা থাকছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষই উচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্রমতে, কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে কারিগরি ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে ব্যাংকের প্রায় শত-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপকৌশলই ছিল এই লুকোচুরির মূল উদ্দেশ্য। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক ঝুঁকিসহ বিবিধ সেবা ঝুঁকিতে পড়ে অগ্রণী ব্যাংক। তাদের মতে, দোষী কোম্পানি ভবিষ্যতে যাতে স্পর্শকাতর ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে ব্যবসা করতে না পারে সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের আইনি পরামর্শকরাও দোষী কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করেছে।