শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্থবছরের ৯ মাস

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শুল্ক আদায়ে ঘাটতি ১৬ হাজার কোটি টাকা

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩৫

রিয়াদ হোসেন 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্বিক রাজস্ব আদায়ে এবার প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই। বরং গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম রাজস্ব প্রবৃদ্ধি। এর মধ্যে শুল্ক আদায়ের পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত বেশি খারাপ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শুল্ক আদায় কম হয়েছে ১৬ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে ৬৩ হাজার ৮২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধিও খুবই সামান্য। গত নয় মাসে শুল্ক আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র সোয়া তিন শতাংশ। অথচ এর আগের অর্থবছরে শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশের উপরে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বড় শুল্ক আদায়ের সম্ভাবনাময় কয়েকটি পণ্যের আমদানি কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় তা শুল্ক আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি হওয়া পণ্য খালাস করে নিয়ে যাওয়া ইস্যুটি নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশি হারে শুল্ক আদায় হয়— এমন পণ্যের আমদানি কমে গেছে। অন্যদিকে স্বল্প শুল্কের আমদানি বেড়ে গেছে। এর ফলে আমদানি শুল্ক আদায় কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। বেশি শুল্ক আদায় হওয়া পণ্য আমদানি কমে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাহলে কি দেশে বেশি শুল্কের পণ্যের ব্যবহার কমে গেছে?

সূত্র জানায়, আমদানি শুল্কের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের মাধ্যমে। বেনাপোল কাস্টম হাউজ থেকেও একটি বড় অংশের শুল্ক আদায় হয়ে থাকে। কিন্তু গত ৯ মাসে ওই দুটি স্টেশনেই শুল্ক আদায়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় কম হয়েছে ৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ৪১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আদায় বেড়েছে মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ। অন্যদিকে গত মার্চে প্রবৃদ্ধি এক শতাংশেরও নিচে।

অন্যদিকে বেনাপোল কাস্টম হাউজে গত ৯ মাসে ৪ হাজার ১শ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। ৯ মাসে আলোচ্য স্টেশনে প্রবৃদ্ধি এক শতাংশও হয়নি। আর গত মার্চে প্রবৃদ্ধি না হয়ে উল্টো আদায় কমে গেছে প্রায় ৬ শতাংশ।

 

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, গত কয়েক বছরে আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশি শুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাচ্ছে। আর নামমাত্র শুল্কের পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি বেড়ে গেছে। অথচ  বেশি শুল্ক রয়েছে, বাজারে এমন পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে। এটি মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসকে ইঙ্গিত করছে। গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে অভিনব পন্থায় অবসরে যাওয়া এক শুল্ক কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি পণ্য চালান খালাস হওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটনের পর এ ধরনের আশঙ্কার বিষয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অনুসন্ধানে দেখতে পায়, অবসরে যাওয়া দুজন কর্মকর্তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার হয়েছে প্রায় চার হাজার বার। এর ফলে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তা বের করতে তিনটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। ওই ঘটনা উদ্ঘাটনের পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তত্কালীন কমিশনারকে সেখান থেকে বদলিও করা হয়। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ ধরনের নানা উপায়ে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

অবশ্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নতুন দায়িত্ব পাওয়া কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শুল্ক আদায় কমে যাওয়ার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। গতকাল ইত্তেফাককে তিনি বলেন, গত ৯ মাসে এই স্টেশনের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি কম হয়েছে ৪ হাজার। ফলে এ খাত থেকেই প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া চিনি ও লবণ আমদানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তিনি বলেন, এ ধরনের ১৯টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে,  যেখানে কোনো আমদানিই হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রেয়াতি সুবিধা দেওয়ায় প্রায় এক হাজার ৭শ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।